পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
কিন্তু কয়লা শিল্পে ব্যাপক দুর্নীতি তাতে দূর হচ্ছিল না। সত্তরের দশকের গোড়ায় কয়লা শিল্প জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু করেন ইন্দিরা গান্ধী। কোকিং এবং নন-কোকিং মিলিয়ে সমস্ত ধরনের কয়লা খনি জাতীয়করণ করা হয় ১৯৭৩-এর ১ মে। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে সাত চল্লিশ বছর। এখন কী দেখছি? দ্বিতীয় মোদি সরকার কয়লা শিল্প বেসরকারিকরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকী কয়লা শিল্পে অনুপ্রবেশের ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে বিদেশি পুঁজিও। ২০১৫-তে কিছু বেসরকারি শিল্পসংস্থাকে তাদের চাহিদামতো কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়। সেই শুরু। তারপর আরও এগিয়ে গিয়ে ২০১৮-তে কয়লাখনি জাতীয়করণ আইন বাতিল করা হয়। কয়লা ভাণ্ডারের উপর এইভাবে সরকারি সংস্থা কোল ইন্ডিয়ার একচেটিয়া আধিপত্য খর্ব করা হয়েছিল। সেই রন্ধ্রপথই মাত্র দু’বছরে সুগম হয়ে উঠল দেশি ও বিদেশি নির্বিশেষে বেসরকারি পুঁজির জন্য।
জাতীয়তাবাদ এবং স্বদেশি শিল্প-বাণিজ্যের জয়গান গেয়ে যে দল ভারতের শাসন ক্ষমতা দখল করেছে, তার বলিষ্ঠ সরকারের কাছে এই নীতি কাম্য নয়। এমন নয় যে কয়লা একটি রুগ্ন শিল্প। এমন নয় যে সরকারের কাছে কয়লা উত্তোলনের আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো নেই। এমন নয় যে মোদিজি একটি নড়বড়ে জোট সরকারের নেতা। এই ব্যাপারে শরিকদের তরফে তাঁর উপর কোনও চাপ আছে। এমন নয় যে এর দ্বারা কয়লা শ্রমিকদের হঠাৎ অনেকখানি আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে। কোনওটাই নয়। তাহলে এই বিপরীত বুদ্ধি কোন কাণ্ডজ্ঞানে! কোন নীতিতে সরকার তার ঘোষিত পথ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে? এসব প্রশ্ন আজ উঠবেই। শুরু থেকেই বিরোধিতা করেছে বামপন্থী এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনগুলি। পিছিয়ে নেই আরএসএস নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-ও। বিএমএস শুধু মৌখিক বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত বদলের দাবিতে তারা বরং যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিয়েছে। কয়লা শিল্পে তিন দিনের ধর্মঘটও ঘোষণা করে দিয়েছে। শ্রম কমিশনারের ডাকা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেও অংশ নেয়নি তারা। বাম ও কংগ্রেস অনুগামী শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করেই বিএমএস এই অভূতপূর্ব কাঙ্ক্ষিত ঐক্যের ছবি তুলে ধরেছে। এজন্য বিএমএস নেতৃত্বের প্রশংসা প্রাপ্য। এমনিতে টানা লকডাউনে দেশের অর্থনীতি স্তব্ধপ্রায়। এই সময়ে ২ জুলাই থেকে কয়লা শিল্পের মতো বৃহৎ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ধর্মঘট বাঞ্ছনীয় নয়। সরকারের উচিত, এমন ইতিবাচক পদক্ষেপ করা যাতে শ্রমিক সংগঠনগুলি ধর্মঘটের রাস্তা থেকে সরে আসতে পারে। প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে সরকার একাই যথেষ্ট। সরকারের টাকা বেসরকারি হাতে যাওয়া এবং দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া ঠেকাতেই এটা করতে হবে। এটা করতে হবে হাজার হাজার কয়লা শ্রমিকের কল্যাণের জন্য এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে।