পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
সারা দেশের মোট শ্রমিকের প্রায় ২০ শতাংশের জীবন-জীবিকা এরকমই। সংখ্যাটা কয়েক কোটি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা এগারো-বারো লক্ষ কম করে। বড় ধরনের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার মতো নিরাপত্তা তাঁদের সকলের নেই। করোনা মহামারীর ধাক্কায় তাঁদের জীবন-জীবিকা প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে এঁদের ভূমিকা বিরাট। তবু, লকডাউন পর্বে তাঁদেরকেই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বিশেষভাবে দায়ী করা যায়। কেন্দ্রের যৎসামান্য আর্থিক প্যাকেজের সুবিধাও এঁদের সকলে পাননি। বিশেষ করে বঞ্চনা করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে। ‘গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান’ প্রকল্প করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সারা দেশে কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলোকে বাঁচানোর জন্যই এই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যকে এই অভিযান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ, এই রাজ্যে ইতিমধ্যেই এগারো লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে চাকরি হারিয়ে। মোদিজির এই সহায়তা প্রকল্পে জায়গা হয়েছে ছ’টি মাত্র রাজ্যের। তার মধ্যে আছে আমাদের প্রতিবেশী তিন রাজ্য ওড়িশা, বিহার ও ঝাড়খণ্ড। বাকি তিনটি হল রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ। এই ছয় রাজ্যের ১১৬টি জেলার গরিব পরিযায়ী শ্রমিকরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।
তাতে পশ্চিমবঙ্গের জায়গা হয়নি কেন? এই বঞ্চনার কারণ কি রাজনৈতিক নয়? এসব প্রশ্ন উঠবেই। কেন্দ্রের যুক্তি, যেসব জেলায় কমপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিক ফিরেছেন, শুধু সেই জেলাগুলোকেই এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ সর্বার্থেই কুযুক্তি। প্রথমত, এই সংখ্যাটা জেলার আয়তন ও জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে। দ্বিতীয়ত, এতে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের দায় বা অপরাধটা কোথায়? তিনি ভারতের নাগরিক। এর চেয়ে কোন বড় পরিচয় তাঁর প্রয়োজন? রাজ্য সরকার অবশ্য বলছে, বাংলায় একাধিক জেলা রয়েছে যেগুলোতে ২৫ হাজারের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের জবাব কী হবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবশ্য হতভাগ্য মানুষগুলোকে কেন্দ্রের দয়ার অপেক্ষায় ফেলে রাখেনি। তাঁদের বিকল্প কাজে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই চার লক্ষ শ্রমিককে একশো দিনের কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা অবশ্য বিকল্প দিক। দায়িত্বটা কেন্দ্রেরই নেওয়া উচিত। পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে কেন্দ্র এ পর্যন্ত অনেক অন্যায় করেছে। সেটা আর বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। রাজ্য বা জেলার গুণাগুন বিচার একটা অবাঞ্ছিত চিন্তা। ‘গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান’ কর্মসূচিতে শুধু দেখা উচিত, মানুষ বা পরিবারগুলো দুঃস্থ কি না বা পরিযায়ী শ্রমিক কি না। নির্দিষ্ট রাজ্য বা জেলার মানুষ না-হওয়াটা তো তাঁদের ‘অপরাধ’ হতে পারে না। এই নিয়ম একই সঙ্গে অযৌক্তিক ও অমানবিক। ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এই নিয়ম অবিলম্বে পাল্টে সংশ্লিষ্ট সকলকেই কেন্দ্রীয় সহায়তা দেওয়া হোক।