বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
রাজ্য পেয়েছে ৭৪৬। গতবার পেয়েছিল ৬১৭। সন্দেহ নেই, কোনও জাদুকাঠির ছোঁয়ায় এই উত্তরণ ঘটেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার
স্কুল শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব পরিবারের শিশু-কিশোরদের স্কুলমুখী করতে যে ধারাবাহিক উদ্যোগ নিয়েছে এই মূল্যায়ন রিপোর্ট তারই প্রতিফলন। করোনার আবহে লকডাউনে বা পরবর্তী সময়ে আনলক-১এ অভ্যস্ত হয়ে ওঠা জীবনে তিনমাস ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় এক অজানা অনিশ্চয়তা ঘুরপাক খাচ্ছে পড়ুয়া থেকে অভিভাবকদের মনে। এই পরিস্থিতিতে স্কুল নিয়ে কেন্দ্রের রিপোর্ট খোলা জানলা দিয়ে টাটকা বাতাস হয়ে হাজির হয়েছে।
বাম জমানায় রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় রসাতলে গিয়েছিল। তাদের
ভ্রান্ত শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্ষেত্রে অনিলায়ন, প্রাথমিকে ইংরেজি এবং
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়ার দৌলতে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছিল। পালাবদলের পর সেই গোড়ায় গলদের বিষয়টি ধরে ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করতে মা-মাটি-মানুষের সরকার নেয় নানা প্রকল্প। মিড ডে মিল বা বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক
ছাড়াও স্কুলের পোশাক, জুতো, স্কুল ব্যাগ ইত্যাদি দেওয়ার বন্দোবস্তও সরকারের তরফে করা হয়। তাতে পড়ুয়াদের স্কুল যাওয়ার আকর্ষণ
বেড়েছে, কমেছে স্কুল ছুটের সংখ্যা। কোনও সাফল্যই একদিনে আসে না। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য পরিকাঠামোগত উন্নতির দিকেও নজর দেওয়াটা জরুরি ছিল। সেটাই করেছে সরকার।
তৃণমূল রাজত্বে কয়েক হাজার নতুন স্কুলও তৈরি হয়েছে। আর কন্যাশ্রী প্রকল্প তো বিশ্ববন্দিত, যা মেয়েদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এতে নাবালিকা বিয়ে কমেছে, তারা পড়াশোনা করছে। এসবেরই সুফল মিলেছে হাতে-নাতে। যার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে পিজিআই রিপোর্টে (২০১৮-’১৯)। কোনও মনগড়া তথ্য নয়, কেন্দ্রীয় রিপোর্টেই স্বীকার করা হল, স্কুল শিক্ষার বিভিন্ন বিভাগে ব্যাপক উন্নতি করেছে বাংলা। এত বেশি নম্বর বৃদ্ধি আর কোনও রাজ্যে হয়নি। রিপোর্টে বাংলার পড়ুয়াদের শিক্ষার মান, স্কুলের পরিকাঠামোর ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে শিক্ষার মান যাচাই করতে কেন্দ্র যে মূল্যায়ন ব্যবস্থা শুরু করেছে তার মধ্যে লার্নিং আউটকাম বা ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার মান, পরিকাঠামো, প্রশাসনিক কাজকর্ম, অ্যাক্সেস ও ইক্যুইটি রয়েছে। লক্ষণীয় যে, পরিকাঠামো বিভাগে বাংলা গতবারের তুলনায় ৩২ শতাংশের বেশি নম্বর বাড়িয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মেধা বিভাগেও গতবারের তুলনায় ১১ শতাংশের বেশি, অ্যাক্সেস বিভাগে ১৪ শতাংশের বেশি নম্বর বাড়াতে সক্ষম হয়েছে বাংলা। যে কেন্দ্র নানাভাবে বঞ্চনা করে বাংলাকে কোণঠাসা করতে চায় তাদেরই দেওয়া তথ্যে স্কুল শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলার এই সাফল্যের খতিয়ান অবশ্যই একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনার যোগ্য জবাবও বটে। তবে আত্মতুষ্টির কোনও অবকাশ থাকা উচিত নয়।
আসলে বাংলায় মেধার কোনও অভাব নেই। সেই মেধার বিকাশের জন্যই প্রয়োজন ছিল যথোপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণ। রাজ্য সরকার সেটাই করেছে। তাতেই স্কুলে পড়াশোনার মান, পরিকাঠামো সবেতেই ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। বলা যায় এই সাফল্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কয়েক বছরের নিরলস প্রচেষ্টারই ফল।