বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
চিকিৎসা করে একটি দেশ কতজনকে সুস্থ করতে পারবে? বিশেষ করে দেশটির নাম যদি ভারত হয়? এখানে জনসংখ্যা ১৩৫ কোটি! মানুষ গণহারে সংক্রমণের শিকার হলে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা অসম্ভব। রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে হলে প্রতিটি মানুষের সমান সহযোগিতা কাম্য। রোগলক্ষণ দেখা দিলেই ডাক্তার দেখাতে হবে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে, আদৌ কোভিড-১৯ পজিটিভ কি না। সংক্রমণ নিশ্চিত হলে রোগীকে অন্যদের থেকে অবশ্যই পৃথক রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট পরিবারটিকেও নিয়মানুসারে চলতে হবে। এর জন্য ভীত বা লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। সরকার আছে। সরকারি ব্যবস্থা আছে। অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা অন্তত পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ ভালো হচ্ছে। এখানে সুস্থতার হার জাতীয় মানে তো বটেই, আন্তর্জাতিক মানেও উল্লেখযোগ্য।
এ হল রুপালি রেখা। কিন্তু, উল্টো পিঠে খারাপ কিছুও যে অপেক্ষা করে। সরকারের এই আন্দাজ নির্ভুল। সমাজে কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষও আছে। তারা লড়াইয়ের অভিমুখটা যেন উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিতে চায়। আসল লড়াই যে শুধু রোগের বিরুদ্ধে, সেটা তারা ভুলে যায়। তার ফলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে লড়াইটা রোগীর বিরুদ্ধেই হয়ে যাচ্ছে! সুচিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষকে সমাজ গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে। এমনকী, কিছু মানুষের সঙ্গে ‘সামাজিক বয়কট’-এর মতোই আচরণ করা হচ্ছে! সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির বাড়িতে লিখে দেওয়া হচ্ছে—‘করোনা বাড়ি’ বা ‘করোনা ফ্ল্যাট’! তাঁদের গলি বা পাড়াকেও অমনভাবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা জানি, কুসংস্কারের চূড়ান্ত রূপ হল নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা। যেমনটা অতীতে যক্ষ্মা বা কুষ্ঠ রোগমুক্ত অনেক মানুষের ক্ষেত্রে করা হয়েছে। ডাইন সন্দেহে প্রহার বা হত্যার ঘটনা এখনও বন্ধ হয়নি। এসব সভ্যসমাজের কলঙ্ক। তাই করোনা-মুক্ত মানুষের সঙ্গে বিরূপ আচরণ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া জরুরি। করোনা রোগীর চিকিৎসা ও শুশ্রূষার সঙ্গে যুক্ত কিছু চিকিৎসক এবং নার্সের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে তাঁরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারেন। ডাক্তার এবং নার্সরা চিকিৎসা করতে ভয় পাবেন। আরও বড় বিপদ হল, এমন পরিণতির আশঙ্কায় অনেক মানুষ রোগ চেপে গিয়ে সমাজের বিপদও বাড়াতে পারেন। এই ব্যাপারে আমাদের সকলকেই বাস্তববোধ নিয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করতে হবে সরকারকেও। অন্যথায়, এই মহৎ লড়াইটা বিপথগামী হয়ে যেতে পারে।