বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
তাই ভারতীয় সংস্কৃতি দেশকে নিছক একটি বক্ররেখার মানচিত্র বলে থেমে যায় না। দেশমাতৃকা জ্ঞানে তাকেও অন্তরে পুজো নিবেদন করে। দেশ কারও কাছে আবার পিতৃভূমিও। জন্মভূমি ভারতবাসীর কাছে স্বর্গের চেয়ে বড়। শাস্ত্রে আরও বলা হয়েছে, পিতাকে তুষ্ট করতে পারলে আর কোনও দেবতাকে আলাদা করে তুষ্ট করার প্রয়োজন পড়ে না। একজন সুসন্তান জন্মদাতা পিতা-মাতাকে যেমন ভক্তি করেন, তেমনি দেশকেও ভালোবাসেন মাতৃভূমি বা পিতৃভূমি জ্ঞানে। সুনাগরিকরা দেশকে এতটাই ভালোবাসেন যে দেশের জন্য আত্মবলিদান দিতেও তাঁদের কুণ্ঠা থাকে না। বরং এজন্য তাঁরা গর্বিত বোধ করেন। দেশের যেসব সুসন্তান এতটা উঁচু মনের অধিকারী তাঁদের জন্য দেশবাসীরও গর্ববোধ থাকে। এই যেমন সম্প্রতি লাদাখ সীমান্তে শহিদ হলেন ২০ জন ভারতীয় জওয়ান। ওই অঞ্চলে চীনা হানাদারদের হাত থেকে দেশের ভূখণ্ডের পবিত্রতা রক্ষা করতে গিয়েই তাঁরা প্রাণ দিয়েছেন। লড়তে লড়তে জীবন দিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলারও দুই সুসন্তান—বীরভূমের রাজেশ ওরাং ও আলিপুরদুয়ারের বিপুল রায়। এই ঘটনায় মর্মাহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৭ জুন, বুধবার ঘোষণা করেন যে, দুই শহিদ পরিবারকে রাজ্য সরকারের তরফে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। ওইসঙ্গে দেওয়া হবে একটি করে সরকারি চাকরি। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য মনে করিয়ে দেন, এসব প্রাণের বিকল্প নয়। তবুও এটা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী শহিদদের স্যালুটও জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী যে তাৎক্ষণিকভাবে হাততালি কুড়নোর জন্য এসব বলেননি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল শনিবার। সেদিন রাজেশের মরদেহ সৎকার হওয়ার পরদিনই সরকারি চাকরিতে ডাক পেলেন রাজেশের বোন শকুন্তলা। সিউড়ি মহকুমা প্রশাসনের তরফে বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে শকুন্তলা ওরাংকে এসডিও অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর কাছ থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ-সহ সেদিনই শুরু হয় তাঁকে চাকরি দেওয়ার প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক মুখ বাংলার মানুষ দেখেছেন। প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তা হারিয়ে ফেলেননি। তাঁর মধ্যে মানবিক মুখ্যমন্ত্রীকেও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বার বার। শহিদ পরিবারের পাশে এত দ্রুত দাঁড়ানোর ঘটনাটি ঠিক তেমনই। উত্তরবঙ্গের শহিদ পরিবারটিও আশা করা যায় একইভাবে তাঁকে পাশে পাবে। কেন্দ্রীয় সরকারেরও অনুরূপ ভূমিকা বাঞ্ছনীয়। দেশের জন্য অকাতরে সবকিছু দিতে প্রস্তুত বীরদের এই সম্মান, এই শ্রদ্ধা প্রাপ্য। কারণ তাঁরা সবরকমে সতর্ক ও জেগে থাকেন বলেই প্রতি রাতে আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যেতে ভরসা পাই। সারাটা দিন স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজ করে যে যার ঘরে ফিরি। একটা সুন্দর জীবন কাটিয়ে দিই কোত্থেকে, নিজেরা টেরই পাই না।