বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
মন ভালো করা খবর পাওয়া গেল জুনের মাঝামাঝি পৌঁছে। দেশের ১৫টি নামী স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মনোরোগ বিভাগ এই ব্যাপারে একটি সমীক্ষা করেছে। তাদের রিপোর্টে জাতীয় মহিলা কমিশনের আগের পর্যবেক্ষণের উল্টো ছবি ধরা পড়েছে। পরিবারগুলির সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতিই লক্ষ করেছেন তাঁরা। পারিবারিক হিংসা হ্রাসের এই মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছে কলকাতা। গোটা লকডাউন পর্বে মহানগরীতে গার্হস্থ হিংসা কমেছে। একইসঙ্গে কমেছে ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো নারীঘটিত অপরাধের ঘটনাগুলি। এই পরিচিত অপরাধ হ্রাসের বিচারে কলকাতা অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় এগিয়েও গিয়েছে। কলকাতা পুলিস সূত্রের খবর, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে বধূনির্যাতনের অভিযোগ (এফআইআর) রেকর্ড হয়েছে ৮০ থেকে ৯০টি। ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউনের ৬৮ দিনে ওই ধরনের অপরাধ রেকর্ড হয়েছে মাত্র ৩০টি। অর্থাৎ বধূনির্যাতনের ঘটনা লকডাউনকালে প্রায় তিনভাগের একভাগে নেমে এসেছে। ইভটিজিং এবং শ্লীলতাহানির মতো অপরাধেও প্রায় একইরকম লাগাম পড়েছে। রেকর্ড করার মতো উন্নতি হয়েছে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধের বেলা। লকডাউনের ৬৮ দিনে মাত্র দু’টি ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। মনোরোগ চিকিৎসার নামী ম্যাগাজিন ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল সাইকিয়াট্রি’তে প্রকাশিত এক সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে: ৪৭ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে পরিবারের মধ্যে ভালোবাসা বেড়েছে। স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ব্যস্ত দুনিয়া। রুটিরুজির প্রয়োজনে বড়রা বড়ই ব্যস্ত। ব্যস্ততা তাঁদের উদয়-অস্ত। ফলে, বেশিরভাগ বাড়িতে শিশুরা বড়দের সাহচর্য পায় না। আগে পরিবারগুলি বড় হতো। ছোটরা ঠাকুর্দা, ঠাকুমা, দাদা, দিদি-সহ অনেকের সঙ্গ পেত। এখন বেশিরভাগ পরিবারেই তাঁরা গল্পের চরিত্রের মতো হয়ে উঠেছেন। ফলে, ছোট ছেলেমেয়েদের নিঃসঙ্গতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল সাইকিয়াট্রি’র ওই রিপোর্ট বলছে, ৪৪ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুদের নিঃসঙ্গতার অভিযোগও কমেছে। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের সম্পর্কেও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করেছেন সমীক্ষকরা। প্রতিবেশী এবং অফিসের সহকর্মীদের মধ্যেও সম্পর্ক আগের চেয়ে মধুর করে তুলেছে করোনাকাল। কলকাতার টুপিতে ‘সেফ সিটি’র পালক আগেই ছিল। লকডাউন পর্বে সেই কলকাতা আরও সুরক্ষিত হয়ে উঠেছে বলে জানা যাচ্ছে কলকাতা পুলিসের ক্রাইম রেকর্ড থেকে।
এইসব সমীক্ষা রিপোর্ট এবং সরকারি তথ্য থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার যে, সমাজ যতটা যতটা কলুষিত তার সবটা অনিবার্য নয়। বেশিরভাগটাই হচ্ছে আমাদের দোষে, আমাদের ভুলে। আমরা একটু সতর্ক, একটু সংযত হলেই বহু অন্যায় বা অপরাধ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারি। তাতে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব হয়। রোজ হাসিমুখে দেখা করা যায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে। সহকর্মীদের সঙ্গে আনন্দে কাজকর্ম সেরেও বাড়ি ফেরা যায়। আমি, আপনি শুভেচ্ছা, ভালোবাসার মন নিয়ে সারাদিন চলতে পারলে আমাদের প্রাপ্যটাও সমান হওয়া সম্ভব। করোনা পরিস্থিতির এই দান আমরা ধরে রাখতে পারি না কি? দারুণ এই পাঠই তবে সকলের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণের মূলধন হয়ে উঠুক।