সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক, কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
বস্তুত, এটা হওয়ারও ছিল। ভেবে দেখতে হবে, করোনা বিপর্যয়ে ভারত গত সপ্তাহেই চীনের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। স্বভাবতই, সবচেয়ে বিপর্যস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির তালিকার উপরের দিকে চলে এসেছি আমরা। তার ভিতরেও পশ্চিমবঙ্গকে একটু আলাদা করে রাখা সম্ভব হতো হয়তো। কিন্তু সেই সম্ভাবনাও জলে চলে গেল পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর বাধ্যবাধকতায়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার লক্ষ লক্ষ মেহনতি মানুষ রুটিরুজির প্রয়োজনে বিভিন্ন রাজ্যে যান এবং আসেন। লকডাউন ঘোষণার ফলে ওইরকম অসংখ্য মানুষ কী দু্র্দশায় পড়েছেন, আমাদের অজানা নয়। তার কারণ, দু’টি। প্রথমত, কেন্দ্র তাদের দায় সেভাবে নেয়নি। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিও চোখ বুজে ছিল—এসব অন্য রাজ্যের ব্যাপার জ্ঞান করে। দায় এড়াননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অসহায় সমস্ত মানুষকেই রাজ্যে ফিরিয়ে আনার মানবিক মুখ হয়ে উঠেছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ইতিমধ্যেই দেড়শোর বেশি ট্রেন পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। শ্রমিক স্পেশাল এবং প্যাসেঞ্জার মিলিয়ে খুব শিগগির আসবে আরও আশিটির বেশি ট্রেন। দেশের মধ্যে হটস্পট চিহ্নিত পাঁচটি রাজ্য হল মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু। এগুলির মধ্যে প্রথমোক্ত তিনটি এলাকা থেকেই সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক বাংলায় ফিরেছেন। লকডাউনের দু’মাস অতিক্রান্ত। এই দীর্ঘ সময়ে পূর্বোক্ত রাজ্যগুলিতে সংক্রমণ বহুগুণ হয়ে গিয়েছে। ফলে, যাঁরা এখানে ফিরছেন তাঁদের মধ্যে কমবেশি কিছু মানুষ সংক্রামিত থাকার আশঙ্কা অমূলক নয়। শুধু ট্রেন নয়, অন্তর্দেশীয় বিমান চলাচলও শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্য রাজ্য থেকে বিমানেও আসছেন কিছু মানুষ। আমরা ইতিমধ্যেই ‘আনলক’ পর্বে প্রবেশ করে গিয়েছি। সুতরাং, আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা চালু হওয়াও এখন সময়ের অপেক্ষা।
তাই এই পরিস্থিতিতে দ্রুত কিছু পদক্ষেপও জরুরি হয়ে উঠেছে সরকারের পক্ষে। সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রয়োজন বোধে কোয়ারেন্টাইন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা আছেই। মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় ৬৯টি কোভিড হাসপাতাল এখনই চলছে। ভালো সংখ্যায় রয়েছে আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটরও। রাজ্য মনে করছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই ব্যবস্থাও যথেষ্ট নয়। বিশেষত যেসব জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকরা বেশি সংখ্যায় ফিরছেন, সেখানে কোভিড চিকিৎসা পরিকাঠামো আরও মজবুত করা প্রয়োজন। তাই কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও নদীয়ার কথা মাথায় রেখে রাজ্য দ্রুত আরও দশ-পনেরোটি কোভিড হাসপাতাল তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্বাগত, প্রশংসনীয়। শুধু পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থে নয়, পুরো বাংলার কল্যাণেই এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ। কোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থাটি বিকেন্দ্রিত হলে প্রান্তিক মানুষের কলকাতায় ছুটে আসার দুর্ভোগটা কমবে। সেটা কলকাতার পক্ষেও হবে স্বস্তির বিষয়।