বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সরকারি হিসেবে, শুধু কলকাতা মহানগরেই ধ্বংস হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার গাছ। মনে রাখতে হবে, কলকাতা বলতে এখন বাস্তবে আর কলকাতা কর্পোরেশন এলাকাটুকুকেই বোঝায় না। উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলি এবং হাওড়া নিয়ে বৃহত্তর কলকাতাই সকলের আলোচনায় আসে। সেই বিচারে এই বিরাট অঞ্চলে নষ্ট-হওয়া গাছের সংখ্যা লক্ষাধিক হয়তো! নগরায়ণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো যুক্তি হল, ভূমি, জলাভূমি ও অরণ্যের উপর বিরাট কোপ পড়ে। তাতে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাছপালা-সহ সমস্ত রকম উদ্ভিদ এবং তাদেরকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকা প্রাণীগুলি—কেঁচো, পতঙ্গ থেকে কাঠবিড়ালি, বেজি, বনবিড়াল, শিয়াল, পাখি প্রভৃতি। মানুষ যতই নিজেকে ‘শ্রেষ্ঠ’ মনে করুক, প্রকৃতি ও পরিবেশ এদের সকলকেই নিয়ে। যে-কোনও একটি অংশ ছেঁটে দেওয়ার অর্থ পরিবেশের ভারসাম্য হারানো। বাতাসের বিশুদ্ধতার চাবিকাঠিটিও এই সিস্টেমের অভ্যন্তরে লুকনো।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে অংশত আপসের নামই নগরায়ণ। এখানেই আমাদের দু’কূল রক্ষার কৌশল নিতে হয়—পরিবেশের ক্ষতি এড়িয়ে নগরজীবন। এই কৌশলের দু’টি দিক—জলাভূমি সংরক্ষণ এবং সবুজের সমারোহ। সাম্প্রতিক দু’দিনের ঝড়ে বৃহত্তর কলকাতার এবং অন্য একাধিক অঞ্চলের গাছপালার বিপুল ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এতে শুধু পাখপাখালি আশ্রয়হীন হয়নি, বাতাসেরও বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। লকডাউনের কাল বলে সেভাবে মালুম হচ্ছে না। যানবাহন, কল-কারখানা প্রভৃতি স্বাভাবিক হলেই ত্রাহি রব ছাড়তে হতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার একেবারে ঠিক সময়ে নতুন ‘সবুজায়ন নীতি’ তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে। কলকাতাকে ফের সবুজে মুড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছন পুরমন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বর্ষাকাল আসন্ন। সমস্ত মানুষকে সঙ্গে নিতে পারলে এই পরিকল্পনার সার্থক রূপায়ণ শুধু সময়ের অপেক্ষা। এটাকে একটা অমূল্য সুযোগ হিসেবেই নিতে হবে। বৃহত্তর কলকাতার পক্ষে উপযোগী বৃক্ষগুলি রোপণের মাধ্যমে আরও সবুজ করে তুলতে হবে এই অঞ্চলটাকে। একই নীতিতে বাকি এলাকারও ক্ষতিপূরণ করতে হবে। সবুজায়ন হয়ে উঠুক আমাদের কালচার, সকলের যাপনচিত্রের অঙ্গ।