সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক, কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
বিশ্বে করোনা বিপর্যয়ের ছ’মাস ছুঁই ছুঁই। একরাশ উদ্বেগ নিয়ে আমরা ভাবতে বসেছি, স্বতন্ত্রতা কিছু কি ধরে রাখতে পারল ভারত? সবচেয়ে বেশি বিপন্ন দেশগুলির থেকে ঠিক কতটা দূরে আমরা? কোনও সংশয় নেই যে ভারতে কোভিড-১৯ টেস্ট পরিকাঠামো দুর্বল। মৃতের সংখ্যা গণনা নিয়েও রয়েছে বিতর্কের অবকাশ। তার পরেও বৃহস্পতিবারের খবর: ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক! মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার ছাড়িয়ে সামনের দিকে ছুটছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। প্রথম সংক্রমণের দুঃসংবাদ পাওয়া গিয়েছিল ৩ মার্চ। সংক্রমণের হার দৈনিক ১০০ ছাড়িয়েছিল ২৩ মার্চ। হাজার ছাড়িয়েছিল এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ২৭ মার্চ দেখা যাচ্ছে, একদিনে ৭ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ পজিটিভ চিহ্নিত হয়েছেন! ভারতে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় ১২ মার্চ। মৃতের সংখ্যা ১০০ ছুঁয়েছিল ৫ মার্চ। সংখ্যাটি হাজার অতিক্রম করেছিল ২৮ এপ্রিল। এখন দৈনিক মৃত্যুর হারটাই উদ্বেগজনক। ২৭ মে একদিনেই মারা গিয়েছেন ১৯০ জন! এই প্রবণতা কতটা ভয়ঙ্কর, তার সাক্ষ্য বহন করছে মৃতের ক্রমপুঞ্জিত সংখ্যাটি—ইতিমধ্যেই সাড়ে চার হাজার অতিক্রান্ত!
সবাই জানি, ভারতে কোভিড-১৯ অন্য দেশ থেকে আমদানি। তাই বিশেষজ্ঞরা গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকানোর উপর জোর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, শুরুতেই বহিরাগতদের সমাজের মূল স্রোতে মিশতে দেওয়া যাবে না। পূর্বলক্ষণ থাক বা না-থাক, প্রথমেই তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজন বোধে করোনা হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করতে হবে। অন্যদের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে যেতে হবে কোয়ারেন্টাইনে—সুবিধা থাকলে তা হোম কোয়ারেন্টাইনও হতে পারে। বাজার, অফিস, পরিবহণ প্রভৃতি সমস্ত ক্ষেত্রের জন্য জানানো হল বিশেষ নিয়ন্ত্রণবিধির কথা। দেশজুড়ে দফায় দফায় লকডাউন চাপিয়ে দেওয়া হল বটে, বাস্তবে দেখা গেল, সর্বমান্য সতর্কতা ও সুরক্ষা দেশবাসী পেলেন না। নিজের তৈরি নিয়ন্ত্রণবিধি কার্যকর হওয়ার পরিবেশ নষ্ট হল সরকারেরই ভুলে। সবচেয়ে বড় ভুলটি হয়েছিল—দেশের নানা প্রান্তের কয়েক কোটি পরিযায়ী শ্রমিককে অন্ধকারে রেখে সুদীর্ঘ লকডাউন চাপিয়ে দেওয়া। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে পড়ে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি। সুতরাং ওইসব এলাকা থেকে যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে আসবেন, তাঁদের উপর বিশেষ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি প্রযোজ্য হওয়া জরুরি। তার জন্য এখানে বিশেষ পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো থাকা প্রয়োজন। একে রাজ্যের ক্ষমতা সীমিত। তার মধ্যে ২০ এবং ২৭ মে দু’-দু’দিন বিধ্বংসী ঝড় বয়ে গিয়েছে বাংলার উপর দিয়ে। কলকাতা-সহ বিরাট অঞ্চল তাতে ভীষণ বিধ্বস্ত। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের পক্ষে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া বাস্তবিকই অসম্ভব। তবুও বাংলার তরফে ২৩৫টি ট্রেনের তালিকা-সহ নিখুঁত পরিকল্পনা রেল মন্ত্রককে জানানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষ সেটা অগ্রাহ্য করে মহারাষ্ট্র থেকে একের পর ট্রেন বাংলার পথে ছেড়ে দিচ্ছে! রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয়ের এই ব্যর্থতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজনৈতিকভাবে তাঁকে বিড়ম্বনায় ফেলতেই এটা করা হচ্ছে। সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগকেই মান্যতা দিচ্ছে নাকি? এত বড় দুর্দিনে এমন রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা দেশবাসী ক্ষমা করতে পারবে তো?