বিদ্যার্থীদের উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। ব্যবসাতে যুক্ত ... বিশদ
বাংলায় সাইক্লোন, টর্নেডো নতুন কিছু নয়। শতাধিক বছরের খতিয়ানটি বেশ দীর্ঘ। বহু বার বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে, স্মরণকালের ভিতরে এই বাংলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আইলাতে। তারপর ফণী এবং বুলবুলের কারণেও আমাদের বেশ ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু উম-পুনের ধাক্কা স্মরণকালের মধ্যে সবকিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে নিঃসন্দেহে। রাজ্য সরকারের মতে, মৃত্যু হয়েছে ৮৬ জনের। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি। জেলাগুলির ভিতরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সেখানে বাড়ি ভেঙেছে লাখ দশেক। সুন্দরবন অঞ্চলের জনজীবন ও অর্থনীতি বিশেষভাবে নদী-নির্ভর। নদীবাঁধই সেখানকার গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণভোমরা। পরিতাপের বিষয়, ২১ মে, বৃহস্পতিবারের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে ৫৬টি গুরুত্বপূর্ণ নদীবাঁধ ভেঙে গিয়েছে। রাজ্যে কয়েক হাজার বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। গাছপালা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে লক্ষাধিক। সর্বমোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি!
এবারের পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। আইলা, ফণী বা বুলবুল কলকাতাকে তাদের দানিবক প্রভাব সেভাবে বোঝায়নি। কিন্তু কলকাতাকে রেয়াত করেনি উম-পুন। গ্রাম, মফস্সলে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক কম এবং পরিকাঠামো ও অর্থনীতির চেহারাটাও তুলনায় ক্ষুদ্র। স্বভাবতই বিধ্বংসী ঝড় মহানগরীকে আঘাত করলে ক্ষয়ক্ষতির বহর বহুগুণ হয়ে যায়। বিরাট পার্থক্য ধরা পড়ে। কলকাতা বলতে এখন বাস্তবে আর কলকাতা কর্পোরেশন এলাকাটুকুকেই বোঝায় না। উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলি এবং হাওড়া নিয়ে বৃহত্তর কলকাতাই সকলের আলোচনায় আসে। স্বভাবতই উম-পুনের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান যে কী মারাত্মক হয়েছে তা বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না—বাসিন্দারা অভিজ্ঞতা থেকেই তা উপলব্ধি করছেন। বৃহত্তর এলাকায় অসংখ্য ছোটবড় গাছ বিদ্যুতের খুঁটি-সমেত ভেঙে পড়েছে। তাতে সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়েছে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও টিভি পরিষেবার অবস্থাও তথৈবচ। সরকার এবং পুরসভাগুলি আগাম সতর্ক ও প্রস্তুত থেকেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। এর বড় কারণ, এ এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে, লকডাউন পরিস্থিতির কারণে লোকবলও সামান্য এক ভগ্নাংশে নেমে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তার ভিতরেও জারি রয়েছে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে সেনা বাহিনী-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থাও। রবিবার পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে। পরিস্থিতির বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদের উচিত, আরও একটু ধৈর্য ধরা, সরকারকে আরও একটু সময় দেওয়া। নাগরিকরা অধৈর্য হলে, অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও যে-কাজ চলছে সেটাও ব্যাহত হতে পারে। পরিণামে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে উল্টে দেরি হয়ে যেতে পারে। তাতে বাড়তে পারে দুর্ভোগ। মনে রাখতে হবে, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধটা আরও মুন্সিয়ানার সঙ্গে চালিয়ে যেতে দ্রুত স্বাভাবিকতায় উত্তরণ একান্ত কাম্য।