কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর ঈর্ষার কারণে সম্মানহানি হবে। ব্যবসায়ীদের আশানুরূপ লাভ না হলেও মন্দ হবে না। দীর্ঘ ... বিশদ
একদিকে করোনা, অন্যদিকে উম-পুনের আঘাতে বিপর্যস্ত জনজীবন, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিয়ে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলা? এখন প্রচুর অর্থের দরকার। অর্থ সঙ্কটের এই ঘোর দুর্দিনে দিল্লি যদি রাজ্যের বকেয়া মিটিয়ে দিতে উদ্যোগ নিত তাহলে হয়তো খানিক সুরাহা হতো। এব্যাপারে তাদের নীরবতা বিস্ময়কর! বারবার চেয়েও মুখ্যমন্ত্রী বকেয়া পাচ্ছেন না। তবে এই ঘূর্ণিঝড়ের কঠিন সময়ে গোটা দেশ পাশে আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্যুইট করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে রাজ্যে এসে আকাশপথে সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখেও গিয়েছেন। আর সব শেষে এই বিপর্যয় মোকাবিলা খাতে অগ্রিম দিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। ঘূর্ণিঝড়ের এই ভয়াবহ তাণ্ডবে বেনজির ক্ষতির মুখে পড়া পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি ট্যুইট করতে প্রধানমন্ত্রীর সময় লেগেছিল ২৩ ঘণ্টা। কাজেই অগ্রিম ঘোষণা করতেও যে তিনি স্বচক্ষে সব দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন, সে ব্যাপারে সংশয় ছিল না। হলও তাই। কারণ, এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবীন পট্টনায়েক নয়। তাই ২০১৯ সালে ‘ফণী’ আঘাত হানার আগেই ওড়িশা সরকারের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ৩৪০ কোটি টাকা। অথচ উম-পুনের ভয়াবহতা যে সাম্প্রতিককালের সব বিপর্যয়ের ইতিহাসকে ছাপিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে আবহাওয়াবিদরা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার উদাসীনই থেকেছে। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাত সামাল দিতে তাদের সাহায্য প্রয়োজন, সে বিষয়ে নিঃসংশয় হওয়া সত্ত্বেও। কেন্দ্র কিন্তু আরও জানে, এমন দুর্যোগের পরই দরকার হয় নগদ, অর্থাৎ অন্তর্বর্তী অনুদানের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছেন, ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১ লক্ষ কোটি টাকার। সেক্ষেত্রে মাত্র হাজার কোটি অগ্রিম কি যথেষ্ট? তাও যদি এই টাকাটা বিপর্যয়ের আগে মিলত!
বাংলার সঙ্গে এই বিমাতৃসুলভ আচরণের কারণ রাজনীতি ছাড়া তো আর কিছু নয়! যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যা হওয়াটা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। তীব্র অর্থসঙ্কটে জেরবার বাংলাকে কিন্তু এই ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি করোনা নামক মারণব্যাধিরও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাও প্রায় তিন মাস ধরে। তার খরচও নেহাৎ কম নয়! উপরন্তু কেন্দ্রীয় বঞ্চনা তো রয়েইছে। বারবার বলা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ এখনও কেন্দ্রের থেকে তাদের প্রাপ্য ৫২ হাজার কোটি টাকা পায়নি।
তাই আজ একটাই আর্জি, এই মহাদুর্যোগের দিনে আর অন্তত বাংলার সঙ্গে দুয়োরানির মতো আচরণ না করে সহযোগিতা করুক নরেন্দ্র মোদি সরকার। ওড়িশা আগাম অর্থ পেয়ে থাকলে বাংলার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রমকে কখনওই ভালোভাবে মেনে নিতে পারে না রাজ্যবাসী। এখন দেখতে হবে বাংলার কথা কেন্দ্রের শাসক কতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে। দুর্গতদের সাহায্যে সত্যি তারা কতখানি আন্তরিক। সবরকম সাহায্যের আশ্বাস অবিলম্বে যেন কার্যকর হয়।
কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের মধ্যে পারস্পরিক রাজনৈতিক মতভেদ আছে। তা দূরে সরিয়ে রেখে, তিক্ততা ভুলে বহুজনহিতায় এখন জরুরি কাজে পারস্পরিক সমন্বয়। অর্থসঙ্কটের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণপণ লড়াই করছে রাজ্য। বিপদগ্রস্ত রাজ্যবাসীর পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্র কতটা সক্রিয় ভূমিকা নেয়, তারই পরীক্ষা আজ। দুর্গত মানুষ বুঝতে পারবেন, কেন্দ্রের শাসক সত্যি তাঁদের প্রতি কতটা সহায়।