বিদ্যায় সাফল্যও হতাশা দুই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কর্মপ্রার্থীদের শুভ যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রের ... বিশদ
কৃষি বিপ্লবে শামিল হয়ে বাংলা মন্বন্তর রুখে দিয়েছে। পক্স, কালাজ্বর, কলেরা, ম্যালেরিয়া, পোলিও প্রভৃতি রোগের সঙ্গেও মানুষ বীরদর্পে লড়েছে। এখন লড়ে যাচ্ছে টিবি, এইডস/এইচআইভি, ক্যান্সারের সঙ্গে। তার মধ্যে উপস্থিত কোভিড-১৯। দেরিতে হলেও এই লড়াইতেও মানুষের জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। তবে, মানুষ এখনও বড় অসহায় বিধ্বংসী ঝড়ের সামনে। শুধু বাংলা নয়, এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার উন্নত দেশগুলির ক্ষেত্রেও এ এক নির্মম সত্য। এই উপমহাদেশে সাইক্লোন এবং টর্নেডোর মতো অপ্রতিরোধ্য ঝড়ের দাপটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবন সন্নিহিত বাংলা: বাংলাদেশের দক্ষিণাংশের জেলাগুলি এবং পশ্চিমবঙ্গের দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ঘনবসতিপূর্ণ এই বিরাট অঞ্চল শতাধিক বছরের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খতিয়ান টাটকা স্মৃতির মতো ধরে রেখেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে দাগা দিয়ে রেখেছে ২০০৯-এর আইলা এবং তার এক দশক পরের শক্তিশালী বুলবুল। আইলার সময় বামফ্রন্টের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত কেন্দ্রের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে জানিয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন, এখনও মনে করতে পারেন রাজ্যবাসী। তার দু’বছরের মধ্যে সরকার বদল হয়ে গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সরকার এসেও সেই দাবির পুরোটা আদায় করতে পারেনি। অত্যন্ত সীমিত আর্থিক ক্ষমতার ভিতর দিয়ে এই সরকার যখন বাংলাকে নিজের পায়ে দাঁড় করাবার শপথ নিয়ে এগচ্ছে, ২০১৯-এর প্রায় শেষদিকে আছড়ে পড়ল বুলবুল। দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জায়গায় বিপুল ক্ষতি হল। নভেম্বরে কেন্দ্রের কাছে ২৩ হাজার কোটি টাকার হিসেব দাখিল করে ক্ষতিপূরণ দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু যথারীতি তা কাকস্য পরিবেদনই হল! রাজ্যের দাবিপূরণে কংগ্রেস ও বিজেপি সরকারের মধ্যে গুণগত তফাত বুঝে পেল না বাঙালি। বুলবুলের ক্ষত নিরাময়ের জন্য বস্তুত যা করার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই করতে হল।
গোদের উপর বিষফোঁড়ার প্রবাদকেও ম্লান করে দিয়ে আকস্মিক আঘাত নামিয়ে আনল কোভিড-১৯। রাজ্যের অভিযোগ, করোনা মোকাবিলাতেও পশ্চিমবঙ্গ অন্তত আর্থিকভাবে কেন্দ্রকে প্রত্যাশামতো পাশে পেল না। নাজেহাল পশ্চিমবঙ্গ গত মার্চে ফের সেই পুরনো দাবির পুনরাবৃত্তি করে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বুলবুলের টাকাটা পেলেও করোনা মোকাবিলায় কাজে লাগাতে পারি। কিন্তু দিচ্ছে না। শেষমেশ মার্চের শেষদিকে বুলবুল বাবদ দাবির তুলনায় সামান্যই (১০৯০.৬৮ কোটি টাকা) রাজ্যকে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অন্যদিকে, রাজ্যের পাওনা রয়েছে কেন্দ্রীয় করের অংশ (যা ৪২% হিসেবে প্রাপ্য) এবং জিএসটির শেয়ার বাবদ প্রাপ্য বিপুল অর্থ। মোদি সরকারের উচিত, পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্য নিয়েই বাংলার পাশে দাঁড়ানো। বাংলা আজ ভীষণ বিপন্ন। একে করোনা আধমরা করে রেখেছে, তার উপর যেন খাঁড়ার ঘা নামিয়ে এনেছে কয়েক ঘণ্টার বিধ্বংসী উম-পুন। এই ক্ষতির বহর সম্ভবত আইলা এবং বুলবুলের যোগফলকেও ছাপিয়ে যাবে। সেই হিসেব মুখ্যমন্ত্রী দ্রুতই পেশ করবেন বলে মনে হয়। শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি ফোন যথেষ্ট নয়, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সক্রিয় হস্তক্ষেপই কাম্য। তাঁকে মনে রাখতে হবে, তিনি বাংলার প্রতিটি মানুষেরও প্রধানমন্ত্রী।