পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এই গর্ত খোঁড়ার প্রকল্পটি এখন কেন্দ্রের বড় হাতিয়ার, বলভরসা। কারণ বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে তারা যে ব্যর্থ এখন তা জলের মতো স্বচ্ছ। যাদের ভোটে এই সরকার ক্ষমতাসীন সেই মানুষের দুর্দিনেও সরকারের পরিকল্পনাহীনতার ছাপ স্পষ্ট। তাই তারা একাধিক ক্ষেত্রে ঋণ সর্বস্ব প্যাকেজ ঘোষণা করছে। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রান্তিক চাষি থেকে হকার, মধ্যবিত্ত, প্রায় সকলের জন্য ঋণের টোপ দিয়ে এবার কি কেন্দ্র মানুষকে ঋণভারে জর্জরিত করার দিকে ঠেলে দিচ্ছে না? চটকদারির আশ্রয়ে নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ঢাকতে নিল এমন এক কৌশল যাতে কর্মসংস্থানের বিষযটি অনুল্লেখ থাকল। বলা হলনা এক নয়া পয়সাও দেওয়ার কথা। স্মরণে রাখা প্রয়োজন এই মোদি জমানাতেই ঋণভারে জর্জরিত হয়ে কত কৃষকের ক্ষুধার জ্বালায় অকালমৃত্যু ঘটেছে। ইতিহাস থেকেও শিক্ষা নিতে নারাজ এই সরকার। তাই করোনা বিপদের দিনে গরিব মানুষ যখন পেট ভরাতে হিমশিম খাচ্ছে তখন তিন বছর ধরে চলা আবাসন প্রকল্পকে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার কথা বলছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এটা কোনও নতুন প্রকল্পই নয়। তাহলে?
আসলে রাজসিংহাসনে বসে কুঁড়েঘরের মানুষের মনের হদিশ পাওয়া বেশ কঠিন। তারজন্য থাকতে হয় মাটির সঙ্গে যোগ। কেন্দ্রের শাসকের সেই যোগসূত্রই আজ বিচ্ছিন্ন। তাই তারা হয়তো সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের উপায় বের করতে পারছে না। অভুক্ত, অর্ধভুক্ত মানুষকে দিচ্ছে ঋণের টোপ। দরকার ছিল কিছুটা হলেও তাঁদের হাতে নগদের জোগান।
লকডাউনের মধ্যে রাস্তায় যখন পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুমিছিল চলছে, তখন কেন্দ্র যেন দয়ার দান হিসেবে ঘোষণা করল আগামী দু’মাস ওই শ্রমিকদের জন্য রেশন কার্ড ছাড়াই মাথাপিছু মাসে পাঁচ কেজি করে চাল/গম, পরিবার পিছু এক কেজি ডাল বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই করেছেন। কেন্দ্র সে পথেই হাঁটলো অনেক দেরিতে। তাও আবার রাজ্যের ঘাড়ে দায় দায়িত্ব চাপিয়ে, যাতে দায়িত্বপালনে এতটুকু ত্রুটি হলেই যাবতীয় দোষ পড়ে রাজ্যের উপর। এর নাম কি মানবিকতা?
লকডাউন শুরুর আগেই যদি কেন্দ্র বিনামূল্যে যে যেখানে আছে সেখানেই রেশন পাবে বলে ঘোষণা করত তাহলে হয়তো এতগুলি প্রাণ বেঘোরে চলে যেত না। এর দায় কেন্দ্রকেই নিতে হবে। আত্মসম্মান বজায় রেখেই রুটিরুজির সন্ধানে ওই শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল। যাদের অনেকের মৃত্যু হয়েছে পথে। আর অবর্ণনীয় দুর্দশায় যারা দিন কাটাচ্ছে তাদের হাতে নগদের জোগান দেওয়ার বিষয় এখনও কেন্দ্র নীরব। তাদের জন্য সস্তায় ভাড়া বাড়ির ব্যবস্থা করতে প্রকল্পের যে কথা শোনানো হল তা সময়সাপেক্ষ। বিনামূল্যে চাল ডাল পেলেও তা রান্নার জন্য হাতে এখনই যে কিছুটা নগদ টাকার প্রয়োজন সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে সরকার পাশ কাটিয়ে গিয়েছে।
প্যাকেজের মাধ্যমে মানুষকে সহায়তার নামে যা করা হচ্ছে তাতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের একনায়কতন্ত্রের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে রাজ্যের হাতে প্রয়োজনীয় অর্থ না দিয়েই ঘুরপথে রাজ্যের ঘাড়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্ব কৌশলে তুলে দিচ্ছে তারা। যেমন, রাজ্যগুলিকে বিপর্যয় মোকাবিলা সংক্রান্ত তহবিল থেকে নাকি টাকা খরচ করতে বলা হচ্ছে। করোনা ঠেকাতে যদি ওই খাতের টাকা ব্যয় হয়ে যায় তাহলে অন্য বিপর্যয় এলে ভবিষ্যতে কী হবে তার কোনও দিশা নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের পদ্ধতিতে রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব। কার্ড ছাড়াও রেশন মেলার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু কীভাবে মিলবে ত বলা হয়নি। আসলে দায়িত্ব থেকে পাশ কাটাতে এবং রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নগদ নয়, ঋণের টোপ দিয়ে পরিস্থিতি সামালের চেষ্টা করছে কেন্দ্র। এই তাদের জনহিতের নমুনা!