বিদ্যায় সাফল্যও হতাশা দুই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কর্মপ্রার্থীদের শুভ যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রের ... বিশদ
করোনার আক্রমণ নগর, শহর ছুঁয়ে গ্রামবাংলা এবং গ্রামীণ ভারতকেও বিরাট বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। কৃষিনির্ভর ভারত কিংবা কৃষিনির্ভর বাংলা—একথা সত্যি। তবু, গ্রামীণ অর্থনীতি একটু সুস্থ ছিল শহরকে আঁকড়ে। গ্রামে যখন কাজের ভাটা পড়ে, তখন কোটি কোটি মানুষ বিকল্প জীবিকার সন্ধানে নগরে ও বড় শহরগুলিতে যান। এঁদেরকেই বলা হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিক। ভারতের কেউ ভালো নেই। তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ আছেন এই হতভাগ্য পরিযায়ী শ্রমিকগুলি, আচমকা অসহায় হয়ে পড়া তাঁদের পরিবারগুলি। পরিযায়ীরা ভিন রাজ্য থেকে বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা খরচ হতো গ্রামের হাটেবাজারে। বাজারে নানা ধরনের জিনিসের চাহিদা তৈরি হতো। চাহিদা বাড়তও নানা সময়ে—যেমন নববর্ষ, পুজো, ইদ। নববর্ষ চলে গেল, বাঙালি টের পেল না। ইদ আসন্ন। তার কয়েক মাস পর পুজো। বাঙালি কি পারবে এই দুই প্রধান উৎসবে মেতে উঠতে? ইতিবাচক ইঙ্গিত নেই। ওঠাপড়াই অর্থনীতির নিয়ম। বাংলার ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে নববর্ষ, ইদ ও পুজোর উৎসব অর্থনীতির ঘাটতির অনেকটাই মিটিয়ে দিতে পারে। কিন্তু বেশিভাগ পরিবারের হাত-গাঁট যে প্রায় শূন্য। ক’জন আর সরকারি চাকরি করেন? ক’জন নামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী? ক’জন কৃষক, ব্যবসায়ী এবং পেশাদার আপৎকাল সামলে নেওয়ার মতো অর্থ সঞ্চয় করে রাখতে পেরেছন? আমরা জানি—এই ভারতে, এই বঙ্গদেশে এসব প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর হয় না।
কিন্তু তাই বলে তো জীবন থেমে থাকবে না। তাকে চালিয়ে নিতেই হবে। মানুষ যখন একা পারে না, বেসরকারিভাবে সংঘবদ্ধ হয়েও নিতান্ত অপারগ, তখনই প্রয়োজন সরকারের সাহায্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নির্বাচিত সরকারের গুরুত্ব এখানেই। টলোমলো, এমনকী নতজানু অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকারকেই পদক্ষেপ করতে হয়। দেশের মানুষের বিরাট প্রত্যাশা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কিন্তু মোদি সরকার সেই প্রত্যাশা পূরণের বদলে মানুষকে এক দুর্বোধ্য হেঁয়ালির মধ্যে ফেলে দিল। বাধ্য হয়ে কিছু রাজ্য সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয়েছে। যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গ্রামবাংলার অর্থনীতি নানা দিক থেকে খাড়া করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। বুধবার রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসক এবং সভাধিপতির সঙ্গে বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা এবং কীভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। তাঁর এই সাধু উদ্যোগ সত্যিই ফলপ্রসূ হবে যদি তা স্বচ্ছতার সঙ্গে রূপায়ণ করা সম্ভব হয়। রেশন ও সামাজিক সুরক্ষার প্রকল্পগুলি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যথার্থই হুঁশিয়ার করেছেন, কোনও অভিযোগ তিনি বরদাস্ত করবেন না। প্রতিটি টাকা যেন উপযুক্ত উপভোক্তাদেরই ভোগের হয়। সরকারি সুবিধা বণ্টনের সময় সেই মুখগুলি মনে রাখুন—এক পঙ্গু শিক্ষিকা তাঁর শেষ সম্বল ভেঙে দু’হাতে ত্রাণ বিলোচ্ছেন, তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ অর্থ সরকারি ত্রাণ তহবিলে দান করে দিচ্ছে এক খুদে স্কুলপড়ুয়া। এর পরেও ছিঁচকে চুরির স্বভাব যারা ছাড়তে পারবে না তাদের আর যাই হোক ‘মানুষ’ সংজ্ঞাভুক্ত রাখা চলে না। রাজ্যেকে বাঁচাতে সরকারের পাশে থাকুন বিরোধীরাও—সমস্ত রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা দূরে সরিয়ে রেখে। সঙ্কীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করা নয়, এই চরম দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই রাজনীতির সার্থকতা। মানুষই যদি না বাঁচল তবে রাজনীতি করবেন কাকে নিয়ে!