কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর ঈর্ষার কারণে সম্মানহানি হবে। ব্যবসায়ীদের আশানুরূপ লাভ না হলেও মন্দ হবে না। দীর্ঘ ... বিশদ
কিন্তু এর শেষ কোথায়, সম্ভবত অর্থনীতির পণ্ডিতদেরও তা অজানা। দীর্ঘ লকডাউনে কেউ ভালো নেই। তবু যাঁরা বাড়িতে বা নিজ নিজ অঞ্চলে আছেন তাঁদের অবস্থাটা মন্দের ভালো বলতে হবে। অন্যদিকে, পরিযায়ীরা আজ সর্বার্থেই নিঃস্ব। তাঁদের চাকরি, টাকা, ঘর—কোনওটাই নেই। তাঁদের সম্বল এক পেট খিদে, এক বুক তৃষ্ণা, চোখের সামনে শেষ না-হওয়া পথ, আর ঘরে ফেরার প্রত্যাশা। ফিরতে গিয়ে বেশকিছু হতভাগ্য মানুষ ইতিমধ্যেই বেঘোরে প্রাণও দিয়েছেন। দেশ মানে একটি মানচিত্র বা রাজনৈতিক ভূগোল নয়। রাষ্ট্র মানে নিছক কঠিন কঠোর একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থামাত্র নয়। মানুষকে ঘিরেই দেশ বা রাষ্ট্রের নির্মাণ। রাষ্ট্রের একটাই ধর্ম—দেশের সব মানুষকে সমানভাবে ভালো রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ। স্বাধীন ভারত বার বার তাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মহামারীর কালে সেই ব্যর্থতা হয়ে উঠেছে বহুগুণ। ২৫ মার্চ লকডাউন ঘোষণার পূর্বে এত এত পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা যে কেন্দ্রীয় সরকার ভাবেইনি, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
এখনও সময় আছে। এই মানুষগুলিকে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে নিরাপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হোক। নিজ নিজ বাড়িতেও পৌঁছে দিতে হবে তাঁদের। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলার যেসব মানুষ বাইরে আছেন তাঁদের ফেরাতে রাজ্য প্রস্তুত। তাঁদের স্বাগত জানাচ্ছে বাংলা। লক্ষাধিক পরিযায়ী মানুষ ফিরেছেন। ফেরার প্রতীক্ষায় আরও কয়েক লাখ।’ শুধু খেয়াল রাখতে হবে, এঁরা যেন এখনই সাধারণ সমাজে মিশে যেতে না পারেন এবং কোনওভাবেই সামাজিক হিংসা ও লাঞ্ছনার শিকার না হন। সরকারি বিধিমতো তাঁদের সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়া জরুরি। প্রয়োজনে চিকিৎসাও করাতে হবে। সঙ্কীর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে রাজ্যগুলির প্রয়োজনমতো অর্থ এবং লজিস্টিক সাপোর্টও অব্যাহত রাখতে হবে কেন্দ্রকে। অন্যথায় লকডাউনের সুবিধাটুকু নস্যাৎ হয়ে যাবে নিমেষে। মনে রাখতে হবে, এটুকু অর্জন করা গিয়েছে অভূতপূর্ব সমবেত কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। এমনকী, সামান্য সময়েই বাংলার কয়েকটি জেলাতেও গ্রিন ও অরেঞ্জ জোনের অবনতি লক্ষ করা গিয়েছে। তাই, আরও যাঁরা ফিরছেন তাঁদের সম্পর্কে এই সাবধনতা অত্যন্ত জরুরি। সেটা শুধু বাকিদের স্বার্থে নয়, তাঁদের পরিবারগুলিরও স্বার্থে। তবেই আমরা দ্রুত এই চক্রব্যূহ কেটে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব।