বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
করোনা ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হওয়ার আগে থেকেই আমাদের দেশের অর্থনীতি ধুঁকতে শুরু করছিল। মারুতি সহ বিভিন্ন গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাই তাদের উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছিল। আর্থিক বৃদ্ধির হার এমনিতেই নিম্নমুখী হয়ে গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কিছু প্রকল্প ঘোষণা করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিল না। হাত পড়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঞ্চিত ভাণ্ডারেও। রাষ্ট্রনায়করা কোনও আশার আলো দেখাতে পারছিলেন না। এমনই এক পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে করোনার দাপাদাপিতে সার্বিকভাবেই সমস্ত দেশের অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছে। লকডাউন ভারতের অর্থনীতির সেই পতনকে আরও ত্বরান্তিত করেছে মাত্র। একথা বললে বোধহয় খুব একটা ভুল হবে না, করোনা এসে আমাদের দেশের কর্ণধারদের কিছুটা হলেও মুখরক্ষার রাস্তা খুলে দিয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে মুডিজের ২০২১-২২ সালে ভারতের আর্থিক বিকাশের পূর্বাভাস আশা জাগিয়েছে।
মুডিজের এই পূর্বাভাসের পিছনে একটা যুক্তি আছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। তাঁদের মতে, করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে ভারতের সামনে বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে যেতে পারে। কারণ করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রায় প্রতিটি দেশ চীনের উপর বেজায় চটেছে। আমেরিকা, জার্মানি সহ বেশ কিছু দেশের রাষ্ট্রনায়করা চীন থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। যদি তাঁরা শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন, তাহলে ভারত তার বেনিফিট ঘরে তুলতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ভারতই হয়ে উঠতে পারে বিদেশি বিনিয়োগের আদর্শ স্থান। সম্ভবত, সেই কথা মাথায় রেখেই মুডিজ এমন একটা পূর্বাভাস দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের অভিমত, করোনা নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে। করোনাকে নির্মূল করার জন্য বসে থাকলে মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে। একেবারে হক কথা। কারণ করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কার করার জন্য চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত মানবদেহে প্রয়োগ হয়নি। ইতালি এবং ইজরায়েল কিছুটা এগলেও ভ্যাকসিন বাজারে আসতে এখনও অনেকটা সময় লেগে যাবে। ততদিন পর্যন্ত হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকলে যত মানুষ করোনায় মারা যাবেন, তার চেয়ে বহু বেশি মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে। লকডাউন করোনা মোকাবিলার অন্যতম প্রধান ওষুধ হলেও চালিয়ে যেতে হবে জীবিকাকে সচল রাখার লড়াই। সতর্ক থেকে, নিজেদের সুরক্ষিত রেখে জীবনের স্বার্থেই জীবিকাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
দিন যত যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার জীবিকা সচলের ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছে। কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুসারে দেশের কনস্ট্রাকশন ও উৎপাদন ইউনিটে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। মারুতি, হন্ডা, টিভিএস, হিরো প্রভৃতি গাড়ি বৃহৎ অটোমোবাইল কারখানাও চালু হয়ে গিয়েছে। আমাদের রাজ্যে হলদিয়ায় পেট্রকেম শিল্পও শতকরা একশো ভাগ উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। এরাজ্যে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। কৃষিকাজে ও চা বাগানে আগেই মিলেছে কাজ শুরুর ছাড়পত্র। কাজ শুরুর পাশাপাশি করোনা মোকাবিলার জন্য বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। পরতে হবে মাস্ক। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ এবং সতর্কতাই করোনা মোকাবিলার মূল দাওয়াই।