গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে কড়া ভাষায় চিঠি দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের রাস্তা সুগম করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও বিষয়টি কেন্দ্রের আওতাধীন, তা সত্ত্বেও যেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির পথের অনেকটা অংশ পশ্চিমবঙ্গের বুকের উপর দিয়ে গিয়েছে, তাই আমাদের রাজ্যের উৎকণ্ঠা-উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ থাকে বইকি! সে কারণেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্য চালু করা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লার চিঠির জবাব দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। কেন্দ্রকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সীমান্ত এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক রয়েছে, তাই এই মুহূর্তে সীমান্ত খোলা যাচ্ছে না।
এই জবাবের যথেষ্ট কারণও রয়েছে। কেননা, আমরা সকলেই জানি, কাজের তাগিদে বিদেশ-বিভুঁই ঘুরে বেড়ানো ট্রাকচালক ও খালাসিদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার কথা। যেখানে-সেখানে থাকা-খাওয়ার সঙ্গে বহু মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয় রোজ। ফলে, ট্রাক নিয়ে বাংলাদেশে যাওয়া এবং ওপার থেকে আসা ট্রাকের চালক ও খালাসিদের মাধ্যমে এরাজ্যে আরও বেশি মাত্রায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে না, তা হলফ করে কে বলতে পারে? এই আশঙ্কার কথাই চিন্তা করছেন নবান্নের শীর্ষ কর্তারা। আমাদের সকলের একথাও নিশ্চই স্মরণে আছে যে, একসময় এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্তের সংখ্যা হু-হু করে বেড়ে যাচ্ছিল, তখন এই ট্রাকচালক ও খালাসিরাই তার অন্যতম একটি বাহক ছিলেন। কিন্তু, সেক্ষেত্রে রক্তের সঙ্গে না-মিশলে সংক্রমণের কোনও সম্ভাবনা ছিল না। এবার তো স্পর্শেই আক্রান্ত হতে হবে— এত বেশি মাত্রায় ছোঁয়াচে এই রোগ!
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েকদিন ধরে বড়বাজার ও মধ্য কলকাতা এলাকায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই কারণে বড়বাজারে ট্রাক চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইছে রাজ্য সরকার। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও বলেছেন, গত কয়েকদিন ধরে আমরা দেখছি, বেলগাছিয়া বা অন্যত্র করোনা রোগের সংক্রমণ কিছুটা কমলেও বড়বাজার, জোড়াসাঁকো, পোস্তা প্রভৃতি এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে। তাই আমরা বড়বাজারে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভাবছি, এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে, পুলিস বিষয়টি দেখছে। শহরের বাইরে যাতে ট্রাকগুলোকে রাখা যায়, সেই পরিকল্পনা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পুলিসকে বিকল্প জায়গা খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকার মনে করছে, বড়বাজার এলাকায় বাইরে থেকে অনেক গাড়ি নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ে আসছে, সেক্ষেত্রে এইসব গাড়ির চালক ও খালাসি প্রতিনিয়ত এখানে যাতায়াত করছেন। ফলে তাঁদের মাধ্যমে রোগ ছড়ানোর একটা সম্ভাবনা রয়েছে। এইসব কারণেই বড়বাজার এলাকায় গাড়ির চাপ কমানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে—পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সন্দেহটিও একেবারে অমূলক বা ভিত্তিহীন নয়। শুধু সরকার নয়, দলগতভাবেও শাসক তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রের নির্দেশের তীব্র বিরোধিতা করেছে। দল আপত্তি জানানোর সঙ্গেই বিষয়টিকে করোনা সংক্রমণ বাড়ানোর চেষ্টা বলেও অভিযোগ করেছে। তৃণমূলের বক্তব্য, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত সিল করাটা যেমন জরুরি, তেমনই সংক্রমণ ঠেকাতেও তাই করা উচিত। এখন সীমান্ত উন্মুক্ত করে কেন এই রাজ্যে করোনা ভাইরাসকে অনুপ্রবেশ করানো হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। এর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ শাসকদলের।
রাজনৈতিক বিরোধিতার ভাষাকে পাশে সরিয়ে রেখেও বলা যায়, বাণিজ্য সড়ক উন্মুক্ত হওয়ার পর কী ঘটবে, বা কী ঘটতে পারে তা অনুমান করা এই মুহূর্তে দূরতিক্রম্য। তবে আতঙ্ক যেভাবে সাধারণ মানুষকে গ্রাস করেছে, তাতে এই দুশ্চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরাও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেই জানতে পেরেছি যে, লকডাউনের প্রারম্ভিকপর্বে বিদেশে বসবাসকারী বিপুল পরিমাণে বাংলাদেশি ঘরে ফিরেছেন। যাঁদের অধিকাংশ রাজমিস্ত্রি, জোগাড়ে, গাড়িচালকের কাজের সূত্রে থাকতেন সৌদি, আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইতালিতে। অতএব, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালুটা আদতে খাল কেটে কুমির ডেকে আনা হবে না তো?