বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
আমাদের দেশের ছবিটা যে খুব আশাব্যঞ্জক, তা নয়। আমরা কিন্তু অনেক আগেই এবং যথার্থ সময়ে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছি। কিন্তু আমরা শৃঙ্খলা শিখিনি। আমরা নিয়মানুবর্তিতা শিখিনি। আমরা কেবল নিয়মকে, সত্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আপন মৌতাতে মেতে থাকতে চাই। পরপর দু’টো ঘটনা সেই সত্যকে একেবারে খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করে দিয়ে গেল। প্রথমটি জনতা কার্ফুর পর। বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুধু হাততালিতে মানুষ তুষ্ট হতে পারেনি। তাতে হয়তো ঐক্যবোধটা ঠিকভাবে প্রকাশিত হয় না। তাই মানুষ দলে দলে কার্ফুর উদ্দেশ্য ভেঙে জাতীয় পতাকা নিয়ে স্লোগানে-গানে মেতে পথে বেরিয়ে হুল্লোড় করেছিল। ফাটিয়েছিল দেদার বাজি। যেন ভারত করোনা ট্রফি জিতেছে। আর দ্বিতীয় মৌতাত দেখা গেল গত রবিবার রাতে। ঘর অন্ধকার করে মোমবাতি জ্বালানোর কর্মসূচি ভেসে গেল মানুষের আতিশয্যের জোয়ারে। ঘর অন্ধকার হল। মোমবাতি জ্বলল। কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে চলবে কেন! ফাটল দেদার বাজি, উড়ল অসংখ্য ফানুস। মুহূর্তে কালীপুজোর রাতের বিশৃঙ্খলা ফিরে এল। লকডাউনে দেশের প্রকৃতি যে সৌন্দর্যটুকু ফিরে পেয়েছিল, তাও নিমেষের দূষণের জালে ঢাকা পড়ে গেল।
উদ্দাম উৎসবের মতো বাজি ফেটেছে সারা দেশজুড়ে। সঙ্গে দোসর ছিল রকেট, ফানুস। মৃত্যমিছিল আর সংক্রমণের আশঙ্কার মধ্যেই ভারত মেতে উঠেছিল আলো আর বাজির উৎসবে। দিল্লি থেকে বারাণসী, ভোপাল থেকে আমেদাবাদ, কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু। উদ্বেগ, আতঙ্ক, প্রার্থনাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল উৎসবের শব্দব্রহ্ম। এভাবেই বুঝি ভারত ‘একজোট’ হয়ে গেল নিয়ম না মানার এক অলিখিত এবং সর্বনাশী খেলায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আলো জ্বালানোর আবেদনের পর থেকে একটা চোরা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল অনেকের মনেই। এই আবেদন মাত্রাছাড়া হয়ে কোথায় যে থামতে পারে, তা জনিয়ে জল্পনা চলছিলই। সেটা রবিবার রাতে দেখা গেল চরম রূপ নিয়েছে। কেউ বলছেন, বড় ক্ষতি হয়ে গেল। কেউ বলছেন, কী সুন্দর একতার বার্তা প্রকাশ পেল দেশজুড়ে। একেই বুঝি বলে মেরা ভারত মহান। আবেগের স্রোতে ভেসে যায় যুক্তি, বোধ।
মনে রাখা দরকার, এখনও আমাদের সঙ্কটকাল কিন্তু কাটেনি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরেই দেখা যাচ্ছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে যে হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল, তাতে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হতে ৭.৪ দিন লাগছিল। কিন্তু নিজামুদ্দিনে ধর্মীয় সভার পর সেই হারটা বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গিয়েছে। এখন ৪.১ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। এই হার আরও দ্রুত হারে বাড়তে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সুতরাং বিপদটা কিন্তু শিয়রে। তাই এখন যত উৎসবের মেজাজে আত্মহারা হবেন, ততই আপনি বিপদকে আমন্ত্রণ জানাবেন। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে সাধু সাবধান, শয়তান সাবধান। জ্ঞানীরা সাবধান, মূর্খরা সাবধান। পক্ষের মানুষ সাবধান। বিপক্ষের মানুষ সাবধান। বিপদ অন্ধ। সে কোনও রং, বর্ণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, লিঙ্গ, ক্ষমতাবান, ধনী, দরিদ্র এসব বিচার করে না। মৃত্যুর কামড় নির্মম ও সত্য।