ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
সত্যি, কেউ যেন একটা হাঁক দিয়ে ‘এই রোকো’ বলে পৃথিবীর গাড়িটা থামিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘ বলছে, এই অবস্থা থেকে কত দিনে বেরোনো যাবে, তা নির্ভর করছে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ত্রাণের উপরে। এই পরিস্থিতিতে ভারতকেও আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, পণ্য উৎপাদন সহ বহু কাজ বন্ধ থাকায় অনেক সংস্থার আয় ধাক্কা খেতে পারে। গাড়ি শিল্পের কথাই ধরুন। অর্থনীতির ঝিমুনির জেরে ভারতে প্রায় দেড় বছর ধরে ধুঁকছিল গাড়ি শিল্প। বাধ্যতামূলকভাবে ভারত স্টেজ-৬ মাপকাঠির গাড়ি বিক্রির সময় এগিয়ে আসায় অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছিল। আর অর্থবর্ষ শেষে তাতে ছায়া পড়ল করোনা ভাইরাসের। ফলে লকডাউনের ধাক্কায় তলিয়ে গিয়েছে গাড়ি বিক্রি। চার চাকা, দু’চাকা ও বাণিজ্যিক—সমস্ত ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে বিক্রি কমার ভয়ঙ্কর ছবি। করোনার প্রভাব কমলেও, আগামী কয়েক মাসে বিক্রি ছন্দে ফিরবে কি না, তা নিশ্চিত নয় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মতে, এর জেরে অর্থনীতিতে যে ধাক্কা আসবে, তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। কর্মী ছাঁটাই হলে বা বেতন কমলে, মানুষও আরও বেশি করে জরুরি প্রয়োজনের জন্য টাকা সরিয়ে রাখবেন। গাড়ি কেনার ইচ্ছে স্থগিত রেখেই।
আন্তর্জাতিক পর্যটনবিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লুটিটিসি) এক সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী পর্যটনক্ষেত্রের সাড়ে সাত কোটি কর্মী চাকরি খোয়ানোর আশঙ্কায়। ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি হারাতে পারে পর্যটনক্ষেত্রের ২.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্ব জিডিপির ১০.৪ শতাংশ জোগান দেয় পর্যটনক্ষেত্র। কর্মসংস্থান তৈরিতেও বিশ্বজুড়ে সম্ভাবনাময় এই ক্ষেত্রের ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১০টি কর্মসংস্থানের মধ্যে ১টি তৈরি হয় পর্যটনক্ষেত্রে। কিন্তু করোনার ধাক্কায় প্রায় অচল হয়ে গিয়েছে পর্যটনক্ষেত্র। রিপোর্ট বলছে, মহামারীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পর্যটনশিল্পে। এই অঞ্চলের দেশগুলোয় প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ কর্মহীন হতে পারে। এরপর বেশিসংখ্যক মানুষ চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে আমেরিকার (প্রায় ১ কোটি ২ লাখ), ইউরোপের (প্রায় ১ কোটি ১ লাখ), আফ্রিকার (প্রায় ৪০ লাখ) ও আবর দুনিয়ার (প্রায় ১৮ লাখ) পর্যটনকর্মীর।
করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্বের বিমানসংস্থাগুলিও। আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিয়া জর্জিভা আসন্ন মন্দাকে ‘নজিরবিহীন’ বলেছেন। ডব্লুটিওর কর্তা রবার্তো অ্যাজেভেদো বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারী হিসেবে এসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতির পাশাপাশি বেকার হবে অসংখ্য মানুষ। করোনা ভাইরাস যেহেতু এক আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ, তাই একে আন্তর্জাতিক ভাবনা থেকেই মোকাবিলা করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হলে ইতিহাস আমাদের ভুলবে না, ক্ষমাও করবে না।
এখন প্রশ্ন একটাই, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমরা কীরকম পৃথিবীতে বাস করব? বাজার বলতে প্রায় কিছুই থাকবে না। সিনেমা হল অদৃশ্য হবে। হোটেল নেই। খেলার মাঠ ফাঁকা। ঘরে ঘরে শুধু কিছু মানুষ বসে আছে। যদি করোনা ভাইরাসকে ধ্বংস করা না যায়, তবে আমরা যেদিকে হাঁটছি সেরকম অবস্থা বোধহয় পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনও আসেনি। এই পরিস্থিতিতে সকলেই ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়। বিশেষ করে শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীরা। যদি কলকারখানা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তবে মুনাফা কমবে, ডিভিডেন্ড কমবে। তাই শেয়ার কারবারিরা শেয়ার ধরে রাখতে উৎসাহী হবে না। এবং তারা শেয়ার বেচতে শুরু করলে শেয়ার বাজার নিম্নমুখী হবে। গোটা দুনিয়ার মতো করোনার মারে অনিশ্চিতের পথে ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎও!