বিদ্যার্থীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অতিরিক্ত চিন্তার জন্য উচ্চ ... বিশদ
সেই তুলনায় প্রশংসনীয় ভূমিকায় পাওয়া গিয়েছে ভারতকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তা স্বীকার করছে। বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামনে থেকে করোনা মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন গুজব, আতঙ্ক ও কুসংস্কার ছড়ানো বন্ধ করার উপর। অন্যদিকে, মান্য স্বাস্থ্যবিধি মতে প্রতিটি নাগরিককে নিরলসভাবে সচেতন করছেন তিনি এবং তাঁর সরকারের প্রতিটি দপ্তর। তার ফলে অগুনতি সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গবাসী অনেকটাই স্বস্তিতে ছিলেন। তাল কেটে গিয়েছে মঙ্গলবার। কলকাতায় এক বাসিন্দার দেহে করোনা সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। সংক্রমণ নিয়েই এই তরুণ সম্প্রতি ব্রিটেন থেকে ফিরেছেন। জ্বর-সর্দি-কাশি জনিত কারণে তার আগে থেকে রাজ্যজুড়ে করোনা বিষয়ক নজরদারিতে আছেন বারো হাজারের বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে ৭০ জনের শরীরের নমুনা কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য এনআইবি পুণে এবং নাইসেডে পাঠানো হয়। উপরে উল্লিখিত ওই তরুণ বাদে বাকি সকলেরই রিপোর্ট নেগেটিভ। মহারাষ্ট্র, দিল্লি, কেরল, কর্ণাটক, হরিয়ানা, পুদুচেরি, তেলেঙ্গানাসহ আরও কয়েকটি জায়গায় করোনা সংক্রমণের নিশ্চিত যে-ক’টি খবর পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির সঙ্গেও বিদেশের কোনও-না-কোনও যোগ রয়েছে। তাই, সতর্কতা হিসেবে বহু দেশের সঙ্গেই ভারতের বিমান ও জাহাজ যোগাযোগ নিয়ন্ত্রিত, এমনকী সাময়িক বন্ধও রাখা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছে ভারতীয়দের বিদেশযাত্রায় এবং বিদেশিদের ভিসা মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে। তবু শেষরক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতের মাটিতে করোনা সংক্রমণে মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমণের শিকার বেড়ে ছুঁয়েছে দেড়শো। ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক রোগটি এবার স্পর্শ করল ভারতীয় সেনা বিভাগকেও।
আত্মসন্তুষ্টির কোনও অবকাশ যে নেই এই তথ্যই তার প্রমাণ—সারা পৃথিবীর পরিপ্রেক্ষিতে এটা ‘সামান্য’ হলেও না। ইতিমধ্যেই সারা দেশে বলবৎ করা হয়েছে মহামারী আইন ১৮৯৭। যে-কোনও ধরনের জমায়েত বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তার মধ্যে আছে রাজনৈতিক প্রচার থেকে মেলা, উৎসব সবই। এই নিষেধাজ্ঞার ছায়া পড়েছে সমস্ত শিক্ষা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রেও। এমনকী কিছু মল, ক্লাব ও পানশালাতেও। এ অত্যন্ত সুচিন্তিত পদক্ষেপ। সরকারের উচিত, শিয়ালদহ ও হাওড়ার মতো বড় স্টেশনগুলিকেও বিশেষ নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধির আওতায় আনা। আরও একটি বিষয়ের দিকে কেন্দ্র এবং সমস্ত রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়া প্রয়োজন, দেখতে হবে একজন নাগরিকও যেন করোনা সংক্রমণের জেরে কোনও প্রকার বিদ্বেষের শিকার না-হন। যেমন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু পড়ুয়ার অভিযোগ, পাঞ্জাবে গিয়ে তাঁরা বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। তাঁদের চেহারায় চীনসহ দূরপ্রাচ্যের মানুষের কিছুটা মিল রয়েছে, আমরা জানি। কিছু অবিবেচক লোক চেহারার আংশিক এই সাদৃশ্যকে সামনে রেখে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুবক-যুবতীদের ‘করোনা ভাইরাস’ কিংবা ‘চাইনিজ’ বলে টিপ্পনী কাটছে! আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা কিন্তু ভালো নয়। অন্যকিছু হুজুগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুবক-যুবতীরা একাধিকবার ভিন রাজ্যে গিয়ে শারীরিক আক্রমণেরও শিকার হয়েছিলেন! তাঁদের কেউ ছিলেন পড়ুয়া, কেউ-বা চাকরিজীবী। বুদ্ধের দেশ, গান্ধীর দেশে এমন সঙ্কীর্ণতা, নীচতা শুধু নিন্দনীয় নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিযোগ্যই বিবেচিত হওয়া উচিত। একে করোনা নিয়ে দেশজুড়ে এক থমথমে পরিবেশ, তার মধ্যে জাতি-বিদ্বেষের অবাঞ্ছিত বিষবাষ্প ঢুকলে লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। আশা করা যায়, বিষয়টি সর্বত্রই গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করবে সরকার। এই মওকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ওষুধপত্রের কালোবাজারির চেনা ব্যাধিটিও যাতে মাথাচাড়া দিতে না-পারে সেটাও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।