ব্যবসায়ে যুক্ত হলে এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো যাবে না। প্রেম প্রণয়ে বাধা। কারও সাথে ... বিশদ
এই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত মানুষের জন্ম হয়, আবার মৃত্যুও হয়। ৮৮ বছর আগে মধুসূদন শিকদারেরও তেমনই আটপৌরে জন্ম হয়েছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু, তাঁর বোধ তাঁকে এই বয়সে এমন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে, যা সাধারণত আর পাঁচটা মানুষের থাকে না, অথবা থেকেও থাকে না। মধুসূদনবাবু নিজের গুণে সেই উচ্চতায় বসিয়েছেন নিজেকে। যেখান থেকে দেখলে অনেককেই নিতান্ত খাটো মনে হয়।
নিজের কিষাণ বিকাশ পত্র আর স্ত্রীর শেষ সম্বল গ্র্যাচুইটির টাকায় কেনা ১৬ লক্ষ টাকার ডায়ালিসিস মেশিন আর জি কর হাসপাতালকে দান করতে স্বাস্থ্যকর্তাদের ঘরে বারবার দরবার করেছেন মধুসূদনবাবু। বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে লাঠি হাতে এ দোর, ও দোর করতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে জখম হয়েছেন বহুবার। তাও নিজের জেদ ছাড়েননি। বরানগরের ক্যান্সার আক্রান্ত এই বৃদ্ধের দানের শর্ত ছিল একটাই। ডায়ালিসিস মেশিন তাঁরা হাসপাতালকে দেবেন, যদি বিশুদ্ধ জলের ইউনিট বসানো হয় তবেই।
সংবাদে প্রকাশ, আর জি করের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা), এমনকী মুখ্যমন্ত্রী—কোথায় না চিঠি লিখেছেন তিনি! মরিয়া বৃদ্ধের চাপে শেষ পর্যন্ত পাথর নড়েছে। বৃদ্ধের ইচ্ছা পূরণ করতে তড়িঘড়ি করে ইমার্জেন্সি বাড়ির চারতলার ডায়ালিসিস ইউনিটের প্ল্যান্ট থেকে আটতলার সিসিইউ পর্যন্ত পরিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর তাতেই খুশি হয়ে মধুসূদনবাবু আনুষ্ঠানিকভাবে সেই মেশিন তুলে দিয়েছেন আর জি কর হাসপাতালকে।
পদাধিকারীরাও একবাক্যে বলেছেন, এমন মানুষ আমরা জীবনে দেখিনি। বারবার তাঁকে বলেছি, শেষ বয়সের জন্য টাকা জমিয়ে রাখুন, চিকিৎসায় লাগবে। কিন্তু, উনি শোনেননি। ঘটনাটি জেনে উচ্ছ্বসিত স্বাস্থ্য রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও বলেন, এমন মানুষ আছেন বলেই পৃথিবী এখনও চলছে। এমনকী এটাই প্রথম নয়, মধুসূদনবাবু আর অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রী শিবানী শিকদারের অবসরকালীন সম্বল ভাঙিয়ে আর জি করকে আগেও দিয়েছেন একের পর এক যন্ত্র।
তাঁদের মনের বহরটাই শুধু বড় মাপের নয়, দানের লড়াইটাও অসামান্য। সরকারি জায়গায় লক্ষ-কোটি টাকা খরচের মেশিন নানা কারণে নিমেষে এসে যায়, কিন্তু কেউ যদি নিজের টাকায় তা দান করতে যান তখন হয় উলটপুরাণ! অশীতিপর ক্যান্সার আক্রান্ত মধুসূদনবাবুর জুতোর সুখতলা ক্ষয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল নিঃস্বার্থ দান করতে গিয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে—কেন এমন হবে? অথচ জনগণের হকের প্রাপ্য বিধায়ক ও এমপিদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচের বিষয়টি যেভাবে প্রচার হয়, সেখানে নিঃশব্দে, নিঃস্বার্থে এক বৃদ্ধ দম্পতিকে কেন দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াতে হবে! শোনা যায়, মরণোত্তর দেহদানের ক্ষেত্রেও এরকমই দুর্ভোগ পোহাতে হয়, মৃতের পরিবার-পরিজনকে। আসলে প্রচার-সর্বস্ব এই যুগে ঢাকঢোল পিটিয়ে আত্মপ্রচার করতে না পারার কৌশল বৃদ্ধ এই দম্পতির জানা ছিল না। কিন্তু, মহৎ কার্য কোনওদিনই ঢেকে রাখা যায় না, দিনের আলোর মতোই তার প্রকাশ ঘটে। মধুসূদনবাবু ও শিবানীদেবীর মতো আরও মহতী মানুষের যেন দেখা মেলে। তাঁদের প্রয়াস সার্থক হোক বহু ব্যয়সাপেক্ষ এই চিকিৎসার সফল রূপায়ণে, উপকৃত হোক হাজার হাজার মানুষ, তাহলেই তাঁদের স্বপ্ন সার্থক হবে।