গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
যে দেশে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করেন না সেখানে যে শ্রমমন্ত্রী তাঁর দেওয়া আশ্বাসপূরণ করবেন না তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। হায়দরাবাদে অছি পরিষদের বৈঠকে পেনশন বৃদ্ধি নিয়ে যে আশ্বাস তিনি দিয়েছিলেন তার থেকে ১৮০ ডিগ্রি সরকার ঘুরে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) ন্যূনতম মাসিক পেনশন দু’হাজার টাকা হলে সেই অতিরিক্ত আর্থিক দায়ভার বহন করা সম্ভব নয় বলে অছি পরিষদের বৈঠকে লিখিতভাবেই জানিয়ে দিয়েছে ইফিএফও। এখন ইপিএফের ন্যূনতম পেনশনের পরিমাণ মাত্র এক হাজার টাকা। ন্যূনতম মাসিক পেনশন দু’হাজার টাকা হলে পরবর্তী দু’বছরে পেনশন তহবিলে খরচ বৃদ্ধির পরিমাণ হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। সারা দেশে ইপিএফ পেনশন প্রাপককের সংখ্যা এখন প্রায় ৬৫ লক্ষ। ইপিএফের এই পেনশন বৃদ্ধির দাবিটি কিন্তু দীর্ঘদিনের। এই দাবি মেনে নেওয়ার প্রশ্নে কেন্দ্রের তরফের টালবাহানার শেষ নেই। যে কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষই বোঝেন এখনকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে এই ন্যূনতম এক হাজার টাকার পেনশনে কিছুই হয় না। ওই টাকায় জীবনধারণ করাটা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। সর্বোপরি অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ মানুষগুলির হাতে ওইটুকু টাকা তুলে দেওয়াটাও যথেষ্ট অসম্মানজনক। সেই অসম্মানজনক কাজটি সরকার করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এর উপর আবার ব্যাঙ্কে জমা থাকা তাঁদের ফিক্সড ডিপোজিটের টাকার সুদের হারও ক্রমশই কমছে। তাই বাস্তবিক অর্থেই তাঁদের শোচনীয় অবস্থা। ইপিএফের পেনশনের টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি পাবে—এই আশায় দিন কাটাচ্ছিলেন ওই প্রবীণরা। কিন্তু ন্যূনতম মাসিক পেনশন দু’হাজার টাকা হলে তার দায় বহন করা সম্ভব নয় বলে ইফিএফের বক্তব্যে প্রবীণ মানুষগুলির দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেল। দায় সারতে ওই অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের পরিমাণ বাড়ানো হলে যে বিপুল আর্থিক দায়ভার তৈরি হবে, তার ফলে ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, যা দীর্ঘমেয়াদে পেনশন তহবিলের উপর প্রভাব ফেলবে ইত্যাদি যুক্তিও খাড়া করা হয়েছে ইফিএফও-র তরফে। যুক্তি যাই থাক, অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ মানুষগুলি যে অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তা সরকারের বোঝা উচিত। কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেই এই বিষয়টির ইতিবাচক মীমাংসার প্রয়োজন।
আর্থিক মন্দার বিষয়টিকে সরকার যতই আড়াল করার চেষ্টা করুক না কেন অস্বীকার করার উপায় নেই যে এখন দেশের আর্থিক পরিস্থিতি আদৌ সুবিধাজনক নয়। এর মধ্যেই কিন্তু কোটি কোটি টাকা খরচ করেই এদেশে স্ট্যাচু মন্দির ইত্যাদি কত কিছুই না তৈরি হচ্ছে। ওই টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু সরকারের অর্থের অভাব বা ঘাটতি ইত্যাদি প্রসঙ্গ ওঠে না। যত সমস্যা দেখা দেয় শ্রমিক স্বার্থ, গরিব মধ্যবিত্তের স্বার্থরক্ষার সময়। সরকারি নীতির কারণেই এই দেশে বড়লোক আরও বড়লোক হয় আর গরিব হয় আরও গরিব। কেন্দ্রের সরকারের মনে রাখা উচিত ইফিএফের পেনশন কিন্তু তাদের দয়ার দান নয়, তা অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারিদের হকেরই পাওনা। আচ্ছে দিনের স্বপ্ন যারা দেখায় সেই মোদি সরকারের উচিত অবসরপ্রাপ্তরা যাতে অন্তত সম্মান বজায় রেখে বাকি জীবনটা কাটাতে পারেন সেই ব্যবস্থাটুকু করে দেওয়া।