কর্মলাভের যোগ আছে। ব্যবসায় যুক্ত হওয়া যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা জুটবে। ... বিশদ
ফের কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাওনা এই টাকা মিললে রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের গতি যে আরও বাড়ানো যাবে, তাও জানিয়েছেন তিনি। জাতীয় স্তরের মন্দার সঙ্গে রাজ্যের অগ্রগতির সূচকের তুল্যমূল্য বিচার করে কেন পাওনা টাকার প্রয়োজন, চিঠিতে তা তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। আর্থিক নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাম আমলের ঋণের আসল ও সুদ বাবদ তিন লক্ষ কোটি টাকা যে তাঁর সরকারই মিটিয়েছে, চিঠিতে সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। রাজ্য বাজেট পেশের পর অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে কোন কোন খাতে, কত টাকা পাওনা রয়েছে, তার হিসেব দিয়েছিলেন মমতা। তখনই জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে তিনি নিজেই চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার করবেন।
বিজেপি সরকারের একের পর এক রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা, দমননীতি, বিরোধী রাজনীতির কণ্ঠস্বরকে মুছে ফেলে দেওয়ার প্রবণতার প্রতিবাদ একা মমতা করে গিয়েছেন প্রথম থেকে। বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলিকে এক বলয়ে বাঁধার চেষ্টা করেছেন তিনি। সে কারণে প্রথম থেকেই মমতার সরকার নরেন্দ্র মোদি সরকারের চক্ষুশূল। কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রতিহিংসামূলক আচরণে তা প্রমাণও হয়ে গিয়েছে। এবারও হকে পাওনা দাবি করে মমতা ফের কেন্দ্রের বিষনজরে পড়তেও পারেন। কিন্তু, তিনি তাতে ভয় না পেয়ে অনমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করেছেন, যা প্রত্যক্ষ করে রাজ্যের মানুষ তাঁকে কুর্নিশ জানাতে কসুর করেনি।
জিএসটি আদায়ে ঘাটতি হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়াটাই কেন্দ্রের রীতি। সংবাদে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রীকে মমতা লিখেছেন, প্রতিবারই সেই ক্ষতিপূরণ পেতে দেরি হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ প্রদানে দীর্ঘসূত্রতা রাজ্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেও লিখেছেন তিনি। রাজ্য থেকে কর ও সেস বাবদ যে পরিমাণ অর্থ কেন্দ্র নিয়ে যায়, তার একটি অংশ ফেরত দেওয়াটাই ডিভ্যালুয়েশন ফান্ড। মোদিকে মমতা লিখেছেন, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে ডিভ্যালুয়েশন ফান্ড বাবদ রাজ্যের বকেয়া ১১ হাজার ২১২ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা। এরই সঙ্গে কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্প (সিএসএস) বাবদ রাজ্যের বকেয়া ৩৬ হাজার কোটি টাকা। শুধু এবারই নয়, গত জানুয়ারি মাসেও কলকাতা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বকেয়া এই টাকা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
অর্থাৎ, এব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই এবং কেন্দ্রীয় সরকারও নিশ্চয়ই মানবে যে, কেন্দ্র ও রাজ্য এই দুই সরকারকেই জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা মেনে কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে এই বিশাল পরিমাণ অর্থ পাওনা থাকলে, কী সমস্যা হয়, সেটা সহজেই বোঝা যায়। কারণ, রাজ্যের মানুষ উন্নয়ন বা পরিষেবা বঞ্চিত থাকলে সরাসরি তৃণমূল সরকারকেই দায়ী করবে। কে বুঝতে চাইবে, আয়ের উৎস থেকেই শিকড় কেটে দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার! ফলে, সরাসরি অভিঘাতটা গিয়ে পড়বে মমতারই ঘাড়ে। সে কারণেই সুষ্ঠুভাবে সরকার পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে তাঁর এই দাবি একান্তভাবে ন্যায্য ও প্রশংসাযোগ্য।