ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি। শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
এবার দেখা যাক, ট্রাম্প সাহেব ভারত সফরের প্রাক মুহূর্তে কেন এমন বোমাটি ফাটালেন। আগামী ২৪ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে আসছেন। তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য ইতিমধ্যেই আমেদাবাদ শহরকে বড় বড় হোর্ডিং দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। দুই রাষ্ট্রনায়কের বিশাল বিশাল ছবি শোভা পাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা এবং আপ্যায়নের জন্য কোটি কোটি টাকা ভারত সরকার খরচ করছে। লক্ষ্য ছিল, দুই দেশের মধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক চুক্তি করে ভারতের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। কিন্তু, সে গুড়ে বালি। কারণ ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, এই সফরে কোনও বাণিজ্যিক চুক্তি হচ্ছে না। তবে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি হবে। আর সেটা হবে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর। অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির সামনে গাজরটি তিনি সুকৌশলে ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
বাণিজ্যিক চুক্তি না হওয়ার দায় তিনি আবার ভারতের উপরেই চাপিয়ে দিয়েছেন। এর আগে তিনি ভারত প্রসঙ্গে বলেছিলেন, শুল্কের রাজা। এবারও সেই সুরেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত সরকার আমেরিকা থেকে এদেশের আসা মালপত্রের উপর মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক বসিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ শুল্কের চাপে তাঁর দেশ ভারতবর্ষকে ‘বিপণনভূমি’ হিসেবে কব্জা করতে পারছে না। এই কারণেই তিনি গত সেপ্টেম্বর মাসে দুই দেশের বাণিজ্যচুক্তি মাঝপথে ঘেঁটে দিয়েছিলেন। এমনকী, জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) খারিজ করে দিয়েছে আমেরিকার। অর্থাৎ বিনা শুল্কে ভারত থেকে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম সহ ১৯০০টি পণ্য রপ্তানির রাস্তা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। এই সব পণ্য সরবারহ করে ভারত ৫৬০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত। গত বছরই ট্রাম্প সাহেব ভারতের জন্য এই মহান কার্যটি সম্পন্ন করেছেন। তাঁর দাবি, আমেরিকার সঙ্গে ভারতকে যদি বাণিজ্যচুক্তি করতে হয়, তাহলে সেদেশ থেকে আমন্ড, ওয়ালনাট, আপেল, চিজ-এর মতো মার্কিন কৃষি ও ডেয়ারি পণ্য আরও বেশি করে কিনতে হবে। ভারত তাঁর ‘দাদাগিরি’র কাছে আত্মসমর্পণ না করায় তিনি এ দেশ থেকে যাওয়া ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির উপর শুল্ক অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এহেন মানসিকতা সঙ্গী করেও ট্রাম্প কেন ভারতে আসছেন। নিন্দুকেরা বলছেন, তাঁর ভারত সফরে আসার একটাই উদ্দেশ্য, আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের ভোট কব্জা। আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশে ভারতের বহু মানুষ থাকেন। তাঁরা সে দেশের নাগরিকত্ব নিলেও ভারতের প্রতি একটা টান সব সময় অনুভব করেন। তাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের তিনি বার্তা দিতে চাইছেন, ভারতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। ভারতের প্রধানমন্ত্রীরও তিনি হরিহর আত্মা। এক কথায়, ভোটের প্রত্যাশী হয়েই তাঁর ভারত সফর। কারণ তিনি খুব ভালো করেই বুঝেছেন, ভারতের গলা টিপে মারার চেষ্টা করলেও নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রতি কঠিন হতে পারবেন না। সব সময় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবেন। তার প্রমাণ মোদিজি আমেরিকায় গিয়ে ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ‘অবকি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দিয়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। তাই তিনি বাণিজ্য চুক্তির কফিনে পেরেক পুঁতে দিলেও ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠান সফল করতে নরেন্দ্র মোদি কোনও কার্পণ্য করবেন না।