ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি। শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
নিয়ন্ত্রণহীন চাওয়া-পাওয়ার নেশা কোন সময় যে তাকে ভিতরে ভিতরে অন্ধ করে তুলেছে, মানুষ দীর্ঘকাল তা টের পায়নি। তার ফলে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছে বহু অমূল্য সম্পদ। তার মধ্যে পড়ে অসংখ্য পাখি, পতঙ্গ, সরীসৃপ প্রাণী, মাছ, বন্য জন্তু, গাছ, লতা, গুল্ম, শস্য প্রভৃতি। চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে অগণিত প্রাকৃতিক জলাভূমি, নদী, পাহাড়, অরণ্য এবং বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ। গত দু-চার দশক যাবৎ এ নিয়ে হইচই হচ্ছে বটে, সর্বনাশটা মানুষ কিন্তু টের পেয়েছে তারও আগে। কিন্তু উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে ছিল ‘কিছুই হয়নি’ ভাবখানা করে। তার পরিণাম আমরা টের পাচ্ছি হাড়ে হাড়ে। শুধু পরিবেশ অসুন্দর হয়ে উঠছে না, সবসময় ভয় হচ্ছে পৃথিবীটা আর কতদিন বাসযোগ্য থাকবে! ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কী রেখে যাচ্ছি! ইতিমধ্যেই আমরা ভুলে গিয়েছি প্রাণ ভরে নির্মল বায়ু গ্রহণ কাকে বলে। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো মহানগরগুলিতে আকাশ চুরি হচ্ছে রোজ। বয়স নির্বিশেষে বেড়ে গিয়েছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। চোখ, ত্বক, হার্ট এবং মানসিক সমস্যাও ক্রমবর্ধমান। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বছর বছর সম্মেলন করেও ক’জনের চোখ খোলানো গিয়েছে? এ কোটি টাকার প্রশ্ন। পরিবেশ বাঁচাবার ধারণাটি এখনও কিছু পরিবেশকর্মীর আর্তনাদের মধ্যেই সীমিত রয়ে গিয়েছে। বাকিদের ভাবখানা হল—এসব ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো পাবলিক’-এর কাজ! এমন হুজুগে আমাদের না-মাতলেও চলবে।
কিন্তু ব্যাপারটা সত্যিই কি তাই? না, একেবারেই না। আজকের দিনে পরিবেশের সমস্যাটা সব মানুষের। পরিবেশটা এই গ্রহের সবকিছুকে নিয়েই। গাছ পাখি সরীসৃপ পশু মাছসহ সমস্ত ধরনের প্রাণী এবং জল জঙ্গল পাহাড় নদী সাগর মরুভূমি প্রভৃতি যার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এদের একটিকেও বাদ দিয়ে পরিবেশ ভাবনার অর্থ হার্ট বা চোখের মতো কোনও একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বাদ দিয়ে মানবদেহকে কল্পনা করার শামিল! ভালো লাগছে যে এবার দিল্লি বিধানসভার ভোটে পরিবেশ ভাবনাটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বাংলাও কেন পিছিয়ে থাকবে? এই অমৃত চেতনার অংশ আজ আমরাও। নেতৃত্বে উঠে এসেছে কলকাতা পুরসভা। শহর কলকাতার জীববৈচিত্রের তথ্যশালা (ডেটা-ব্যাঙ্ক) তৈরি করতে চলেছে পুরসভা। ওয়ার্ড ধরে ধরে কোন এলাকায় কী ধরনের জলাশয়, গাছ ও প্রাকৃতিক প্রাণী আছে তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সমীক্ষার সূত্রে বোঝার চেষ্টা হচ্ছে তাদের যথাযথভাবে রক্ষা করার জন্য কী কী প্রয়োজন। পুরসভা এই কাজে যুক্ত করেছে বিভিন্ন কলেজের উপযুক্ত ছাত্রছাত্রীদের এবং পরিবেশরক্ষার কাজে যুক্ত কিছু সংগঠনকে। যাবতীয় সঙ্কীর্ণতাকে একপাশে সরিয়ে রেখে এই পবিত্র উদ্যোগের অংশ হওয়া উচিত সব দলের। কারণ, সমবেত উদ্যোগে পরিবেশ বাঁচলেই আমরা বাঁচব, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও রেখে যেতে পারব একটি বাসযোগ্য পৃথিবী। বাসযোগ্য পৃথিবীটাই তো আমাদের সমবেত চাহিদা।