কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
লালগড় থানার মালখানা থেকে ১৮টি বন্দুক চুরির ঘটনাকে আর পাঁচটা চুরি বা দুর্নীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। কারণ থানাটির নাম লালগড়। একদা মাওবাদীদের আঁতুড়ঘর। মাওবাদীরা শুধু রাজ্যের নয়, গোটা দেশের মাথাব্যথার কারণ। একদা ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তাদের কার্যকলাপে ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল। বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে মাওবাদীদের গুলিতে। ব্যাঙ্ক লুট, বিএসএফ ক্যাম্পে আক্রমণ করে নির্বিচারে গুলি করে মারা, ল্যান্ড মাইন পেতে গাড়ি উড়িয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ত্রাস সৃষ্টির জন্য মাওবাদীরা দিনের পর দিন মানুষকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে খুন করেছে। বাম জমানায় জঙ্গলমহলে এটা হয়ে গিয়েছিল রুটিন ব্যাপার। ঘুম চলে গিয়েছিল জঙ্গলমহলের। অন্যান্য রাজ্যে মাওবাদীদের সক্রিয়তা সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা বদলের পর মাওবাদীরা পাততাড়ি গুটিয়েছে। বিশেষ করে কিষেণজির মৃত্যুর পর।
তবে ষড়যন্ত্র কখনও থেমে থাকে না। তাই শান্তি এবং স্বস্তি কখনও চিরস্থায়ী হয় না। আপাতত এ রাজ্যে মাওবাদীরা নাশকতা চালাতে পারছে না। তার মানে এই নয়, তারা রণে ভঙ্গ দিয়েছে। বরং পুলিস প্রশাসনের কাছে খবর, তারা এরাজ্যে নতুন করে সংগঠন গড়ার লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর ভয়টা সেখানেই। লালগড় থানার মালখানা থেকে একটি একটি করে ১৮টি বন্দুক চুরির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে সেই আশঙ্কা আরও ঘণীভূত হচ্ছে।
বন্দুকগুলি গেল কাদের কাছে? ছোটখাট আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রভৃতি কাজে লিপ্ত লোকজন সংগ্রহ করে। কিন্তু, একনলা বা দোনলা বন্দুকের মতো বড় আগ্নেয়াস্ত্র এই সব দুষ্কৃতী কেনে না। অতীতে দেখা গিয়েছে, এই ধরনের অস্ত্র মূলত ব্যবহৃত হয় রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অথবা গ্রাম দখলের কাজে। একটা সময় কেশপুর, গড়বেতায় এই ধরনের বেআইনি বড় মাপের আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল। তাই লালগড়ের মালখানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র লোপাটের ঘটনায় অনেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।
লালগড় অস্ত্র লোপাট কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত পুলিসের সাব ইন্সপেক্টর তারাপদ টুডু, এনভিএফ লক্ষ্মীরাম রাণা এবং বিনপুরের মুরকুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুধাংশু সেনাপতি ও তার ছেলে দিলীপকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। সুধাংশু ও দিলীপ জঙ্গলমহলে অস্ত্র বিক্রির দায়িত্ব নিয়েছিল। তবে, তাদের চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না। রাজ্য পুলিসের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স(এসটিএফ) পুরুলিয়া শহর থেকে এক ব্যক্তিকে অস্ত্র পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল। উদ্ধার হয়েছিল একটি দোনলা বন্দুক। তার কাছ থেকে পুলিস জানতে পেরেছিল, লালগড়ের এক ব্যক্তি তাকে বন্দুকটি বিক্রি করেছে। কিন্তু, তখনও এসটিএফ জানতে পারেনি, সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে আছে। বিষয়টি জানা গেল ১৬ জানুয়ারি। ওই দিন তারাপদ টুডু লালগড় থানার মালখানার দায়িত্ব বোঝাতে গিয়েই বেকায়দায় পড়ে যায়। দেখা যায়, মালখানার স্বয়ং রক্ষকই একটি একটি করে ১৮টি বন্দুক তার শাগরেদ লক্ষ্মীরামকে দিয়ে গায়েব করে দিয়েছে।
তারাপদর অপকম্ম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, এতদিন পুলিসের যে মালখানাকে অতীতে সুরক্ষিত বলে মনে করা হতো, তা আর মোটেই সুরক্ষিত নয়। তাই দায়িত্ব হাতবদলের সময় সহকর্মীর উপর বিশ্বাস রেখে কাগজেকলমে দায়িত্ব নেওয়া উচিত হবে না। বুঝে নিতে হবে মালখানার মালপত্র। পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই দরকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সারপ্রাইজ ভিজিটও।