কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
আর মাত্র ক’টা দিনের অপেক্ষা। দেশের বাজেট পেশ করতে চলেছেন নির্মলা সীতারামন। তার আগে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ যে পূর্বাভাস দিয়েছেন, তাতে ড. অরবিন্দ সুব্রামনিয়ানের কথার প্রতিধ্বনিই লক্ষ করা যাচ্ছে। আইএমএফ তিনমাস আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০১৯-২০ সালে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার হবে ৬.১ শতাংশ। মঙ্গলবার ওই সংস্থাই বৃদ্ধির হার ৪.৮ শতাংশে নামিয়ে এনে দেখিয়েছে। এতে প্রমাদ গুনছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার। শুধু ভারতের জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্যও। কারণ, ভারতের মতো সুবৃহৎ অর্থনীতি রুগ্ন হয়ে পড়লে তার স্বাভাবিক নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়ে। আইএমএফ কর্ত্রী ইতিমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির অনুমিত হার ০.১ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারতে সবচেয়ে সঙ্কটে রয়েছে নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল সেক্টর। গ্রামীণ আয়ের ক্ষেত্রেও বৃদ্ধির হার হতাশাজনক। তাঁর ধারণা, কিছু সরকারি সিদ্ধান্তও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এনআরসি নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না-করলেও আর্থিক বৃদ্ধির পথে বাধার জন্য সামাজিক অসন্তোষ বৃদ্ধিকেও তিনি চিহ্নিত করেছেন। অন্যদিকে, সোমবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে শুরু হয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের ৫০তম বার্ষিক সম্মেলন। তার আগে অক্সফ্যাম প্রকাশ করেছে তাদের ‘টাইম টু কেয়ার’ নামে একটি রিপোর্ট। তাতে বস্তুত ভারতের ক্রমবর্ধমান ধনবৈষম্য নিয়ে তুলোধনা করা হয়েছে। রিপোর্টটিতে দেখানো হয়েছে, ভারতের ১ শতাংশ ধনকুবেরের হাতে যত পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা সারা দেশের ১০০ কোটি গরিবের মোট সম্পদের চার গুণ! ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ভারতে প্রায় সাড়ে ২৪ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, ভারতের প্রথম সারির ৬৩ জন ধনী ব্যক্তির ভাণ্ডারে রয়েছে তার থেকেও বেশি সম্পদ। ধন-সম্পদের মালিকানায় লিঙ্গবৈষম্যটি আরও মারাত্মক।
সব মিলিয়ে ভারতের অর্থনীতি যে দ্রুত তলানিতে যাচ্ছে সে নিয়ে বিতর্কের অবকাশ ক্রমশ কমে আসছে। ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ গড়ার ভাবনাটিও হয়তো রূপকথার মতো দূরে সরে যাচ্ছে। এই সর্বনাশের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে এবারের বাজেটকেই হাতিয়ার করা উচিত। লক্ষ্য এমন হওয়া উচিত, যাতে শিল্প-বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়—দেশজুড়ে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে গরিবের আয়বৃদ্ধির উপর। অতি সাধারণ যোগ্যতার মানুষের কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে দ্রুত। গরিবের হাতে পয়সা না-বাড়লে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির বা বাজার চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ নেই। ভোগ্যপণ্যের চাহিদার উপর শিল্পের বিকাশ বহুলাংশে নির্ভরশীল। এটি ধনবৈষম্য হ্রাসের একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। ধনবৈষম্য হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে লিঙ্গবৈষম্যও কমানোর উপর জোর দিতে হবে। মহিলাদের হাতে পয়সার জোগান বাড়ানোর সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে। আর্থিক বৃদ্ধির হিসেবে ‘জল মেশানো’ প্রসঙ্গে ড. সুব্রামনিয়ানের অতীতের পরামর্শটিও মনে রাখা দরকার, জিডিপি থেকে কর্মসংস্থান, এমনকী সরকারি অ্যাকান্টসসহ সমস্ত ক্ষেত্রে তথ্য তৈরির বিষয়ে ভারতের বহুদিনের
সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি পুনরুদ্ধার করা উচিত। একইসঙ্গে
জিডিপি হিসেব করার পুরো পদ্ধতি এবং সেটা কার্যকর করার প্রক্রিয়া
একটি স্বাধীন টাস্ক ফোর্স দিয়ে খতিয়ে দেখা আবশ্যক। কারণ, ভারতের অর্থনীতিতে বিশ্বের সত্যিই কিছু যায় আসে।