বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
পঞ্চায়েত দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সর্বশেষ ওই পুরস্কার মিলেছে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের জন্য। ওই সময়ে রাজ্যে শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে ২৮ কোটি। ৭৭২৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এই প্রকল্পে, উপকৃত হয়েছে প্রায় ৫২ লক্ষ পরিবার। সবচেয়ে বড় কথা, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি কাজ হয়েছে বাংলায়। রাজ্য যতই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছচ্ছে, কেন্দ্র ততই তার বাঁধন শক্ত করছে, নজরদারির নামে ছড়ি ঘোরানোর রাস্তা তৈরি করছে, এমন অভিযোগ নবান্নের প্রশাসনিক কর্তাদের মুখে বারবার শোনা গিয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে নজরদারি চালাতে ১৫ জন বাঘা অফিসারকে রাজ্যে পাঠানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তা আরও একবার প্রমাণিত হল।
একইসঙ্গে নবান্নের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের ক্ষেত্রেও কেন্দ্র-রাজ্য যে অনুপাত ছিল, তাতে বারবার পরিবর্তন এনে রাজ্যের দেয় অর্থের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ জানাতে মুখ্যমন্ত্রী তাই বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নামের সঙ্গে বাংলা কথাটি জুড়ে দিয়েছেন।
রাজ্যের আরও একটি সাফল্যের দিকে তাকানো যাক। কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের তথ্যই বলছে, সারা দেশে শিল্পক্ষেত্রে মহিলা কর্মী এবং মহিলা উদ্যোগপতি, দুটি ক্ষেত্রেই শীর্ষে বাংলা। দেশে মোট মহিলা কর্মীর সংখ্যা যেখানে ২ কোটি ৬৫ লক্ষ, রাজ্যে তা ৪৩ লক্ষ ৫১ হাজার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ু অনেক পিছিয়ে। সেখানে সংখ্যাটা হল ৩২ লক্ষ ২৭ হাজার। কেন্দ্রেরই তথ্য বলছে, এরাজ্যে ২৯ লক্ষেরও বেশি মহিলা নিজে ব্যবসা চালান, সারা দেশে যা সবচেয়ে বেশি এবং ২৩.৪২ শতাংশ।
বোঝাই যায়, একের পর এক সাফল্যের মুকুট স্রেফ রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্রের রোষের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও রাজ্য কেন্দ্রের প্রকল্প রূপায়ণে যেমন মুন্সিয়ানা দেখিয়ে চলেছে, তেমনি নিজেও একের পর এক প্রকল্প চালু করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করেছে। তারই অন্যতম হল ঐক্যশ্রী। যেমনটি সম্প্রতি হয়েছে সংখ্যালঘুদের স্কলারশিপ প্রকল্পে। লক্ষ লক্ষ আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়ে বহু পরিবার। অবশেষে মমতাই নিজ উদ্যোগে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের জন্য এনেছেন নতুন প্রকল্প ঐক্যশ্রী। যার সাফল্য জানান দিচ্ছে ইতিমধ্যেই জমা পড়া আবেদনের সংখ্যা।
তারও আগে চালু হওয়া এবং সাড়া জাগানো রূপশ্রী প্রকল্পের কথাই ধরা যাক। এই প্রকল্পে মেয়েদের বিয়ের অনুদান খাতে জুলাই মাস পর্যন্ত রাজ্য খরচ করেছে ৬৭৭ কোটি টাকা। উপকৃত হয়েছে ২ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪৮১ জন। সম্প্রতি আরও একটি খবর বিজেপি শিবিরে দুঃসংবাদের মতোই হাজির হয়েছে। রেশনে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা মমতার মাস্টার স্ট্রোক বলেই পরিচিত। সেই ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে চালের দাম এক টাকায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা চলছে খাদ্য দপ্তরে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আসন্ন পুরভোট এবং সর্বোপরি ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে বিরোধী শিবিরে এটা যে বড়সড় ধাক্কা হবে, তা বলাই বাহুল্য। এসবেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন দিল্লির দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা।
এভাবে বারবার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দোহাই দিয়ে টিম পাঠিয়ে, বরাদ্দ কমিয়ে দিয়ে অথবা আবেদনপত্র বাতিল করে দিয়ে যেভাবে একের পর এক আঘাত রাজ্যের উপর নামিয়ে আনা হচ্ছে, তা সবসময়ই যুক্তিসঙ্গত, একথা জোর দিয়ে বলা যায় না। বরং এর পিছনে আরও বেশি কাজ করে রাজনৈতিক অভিসন্ধি। যা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ককে আরও তিক্ত করছে। রাজ্যগুলিকে নিয়েই দেশ। তাই কোনও একটি রাজ্যের উন্নতি দেশকেই সমৃদ্ধ করে। সেক্ষেত্রে এ ধরনের পদক্ষেপ কখনওই কাম্য নয়।