কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
গত শনিবার কুলগাঁওয়ের মীরবাজার এলাকা থেকে হিজবুল জঙ্গিদের সঙ্গে অস্ত্র সমেত ধরা পড়ার পরেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ডিএসপি দেবীন্দরকে। ৪৮ ঘণ্টা জেল হেফাজতে রাখার পর ডিএসপি পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় তাঁকে। ইতিমধ্যে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুপারিশও জানানো হয়েছে। এমনকী ২০১৮ সালে যে বীরত্বসূচক পদক দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করে জম্মু-কাশ্মীর, তা ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেনারেল অব পুলিস দিলবাগ সিং। ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জঙ্গিদের নিরাপদে সমতলে পৌঁছে দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন দেবীন্দর। দেবীন্দরের সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন হিজবুলের উপ-দলনেতা নাভিদ বাবু। যে আগে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিসের কর্মী ছিল। ২০১৭ সালে চারটি রাইফেল নিয়ে সে পালিয়ে যায় ও হিজবুলে যোগ দেয়। উপত্যকায় ১১ জন শ্রমিক হত্যায় অভিযুক্ত নাভিদ ছিল জম্মু-কাশ্মীর পুলিসের কাছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি। হিজবুলের সঙ্গে দেবীন্দরের ঘনিষ্ঠতা কতটা এবং জঙ্গিদের কীভাবে সাহায্য করছিলেন তিনি, তার তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। গোয়েন্দা সূত্রে উঠে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোয়েন্দাদের অনুমান, শ্রীনগরে পোস্টিংয়ের সময়েই হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে দেবীন্দরের। যোগাযোগ তৈরি হয় হিজবুল কমান্ডার নাভিদ মুস্তাক ওরফে নাভিদ বাবুর সঙ্গে। শ্রীনগরে সেনার ১৫ কোরের সদর দপ্তরের পাশে ইন্দিরা নগরে দেবীন্দরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে একে-৪৭ সহ নানারকম আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিস। মনে করা হচ্ছে, এই পুলিস অফিসারের বাড়িতেই নিজেদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখত হিজবুল জঙ্গিরা। চলত টাকাপয়সার লেনদেনও।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র জানিয়েছে, দেবীন্দরের নামে থাকা পুরনো অভিযোগের ফাইল খোলা হচ্ছে। ২০০১ সালে সংসদ হামলায় অন্যতম দোষী আফজল গুরু ওই কাণ্ডে দেবীন্দরের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছিল। আফজলের অভিযোগ ছিল, দেবীন্দরের চাপে পড়েই তাকে সংসদ হামলাকারী এক জঙ্গির দিল্লিতে থাকা ও গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে হয়েছিল। আফজলের সেই পুরনো অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। দেবীন্দরের ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে ধরা পড়েছে হিজবুলের আরও সক্রিয় সদস্য রফি রাঠোর এবং গাড়ির চালক কাশ্মীরের এক আইনজীবী, হিজবুলের সদস্য ইরফান শফি মির। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শোপিয়ানে গিয়ে নাভিদকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন দেবীন্দর। সেখান থেকেই বাকিদের গাড়িতে তুলে রওনা দিয়েছিলেন দিল্লির দিকে। অনুমান করা হচ্ছে, দিল্লি, পাঞ্জাব, চণ্ডীগড়ে একাধিক নাশকতার ছক কষছিল ওই হিজবুল জঙ্গিরা। রাজধানীতে লুকিয়ে থাকা হিজবুলের কোনও এক ঘাঁটিতে তাদের পৌঁছে দেওয়ার বরাত নিয়েছিলেন দেবীন্দর। কিন্তু সেই অভিসন্ধি সফল হয়নি। পুলিস অফিসারের ফোন ট্র্যাক করে জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর গোপন কথাবার্তা ও ঘুষ নেওয়ার কথা জানতে পেরে গিয়েছিলেন শোপিয়ানের পুলিস সুপার সন্দীপ চৌধুরী। তারপর থেকেই গোয়েন্দাদের কড়া নজরে ছিলেন দেবীন্দর সিং। জঙ্গিদের নিয়ে দিল্লি যাওয়ার ছক সামনে আসার পরেই জম্মু-কাশ্মীর পুলিসের ডিআইজি অতুল গয়ালের নেতৃত্বে তৈরি হয় অপারেশন ব্লু-প্রিন্ট। জম্মু পুলিসের বিশ্বস্ত অফিসারদের নিয়ে তৈরি হয় বিশেষ টিম। হাইওয়ের একটি টানেলের ভিতর আটকানো হয় দেবীন্দরের গাড়ি। জঙ্গি ও অস্ত্রসমেত ধরা পড়েন পুলিস অফিসার। এহেন দেবীন্দর সিংয়ের বিরুদ্ধে তদন্তের ভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ায় মোদি সরকারকে আক্রমণ করা শুরু করেছেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস নেতা ট্যুইট করে বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদী দেবীন্দর সিংকে চুপ করানোর উপায় এই মামলা এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া। এনআইএ-র মাথাতেও আছেন আর এক মোদি, ওয়াই সি মোদি। গোধরা পরবর্তী দাঙ্গা ও হরেন পাণ্ড্য খুনের তদন্তভার ছিল তাঁর উপরে।’’ তাঁর অধীনে এই মামলা ধামাচাপা পড়ে যাবে বলে অভিযোগ রাহুলের। বিরোধীরা জানিয়েছেন, মাত্র একজনের পক্ষে জঙ্গিদের ক্যারিয়ারের কাজ করা সম্ভব নয়। এই চক্রে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে হবে। ছ’মাসের মধ্যে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে তাঁর বিচার হওয়া উচিত ও দোষী প্রমাণিত হলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে বিচার হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি তুলেছে কংগ্রেস। জবাবে বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস যে ধরনের মনোভাব দেখাচ্ছে তাতে গণতান্ত্রিকভাবে সার্জিকাল স্ট্রাইক হওয়া উচিত ওই দলের বিরুদ্ধে।’’ দেবীন্দর ইস্যুতে দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে তরজা চলুক বা না চলুক, এ কথা স্পষ্ট, সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে রয়েছে। যার খেসারত দিতে হবে আম আদমিকেই।