কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
এই মুহূর্তে ধারে ও ভারে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল অবশ্যই বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে বহু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞকে তাক লাগিয়ে ১৮টি আসন দখলের পর তো আরও বেশি করে বিজেপিকে নম্বর দিতে হচ্ছে। এমন একটা দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু। এই কৃতিত্বের অনেকটাই তিনি দাবি করতে পারেন। তবে কৃতিত্ব যদি নিতে হয়, কিছু দায়ও তাঁর নেওয়া উচিত। আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বড় দায় হল, মুখে লাগাম টানার যা বিজেপির অনেকেই টানছেন না। মহাজ্ঞানী মহাজন হয়ে দিলীপবাবু ইদানীং কুকথার ফুলঝুরি ছড়াচ্ছেন। নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ কারও অজানা নয়। পশ্চিমবঙ্গেও তার প্রভাব পড়েছে। আগুন জ্বলেছে। ভাঙচুর হয়েছে সরকারি সম্পত্তিও। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এই প্রতিবাদকে নৃশংসভাবে দমন করেছে। গুলি করে মারা হয়েছে এই দেশেরই নাগরিকদের। যাঁরা শুধুই মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। অবশ্যই তাঁদের প্রতিবাদের ধরন ভুল ছিল। কিন্তু পুলিসের গুলিতে প্রাণ দেওয়াটা নিশ্চয়ই তাঁদের ভবিতব্য ছিল না! অথচ, দিলীপ ঘোষ সেই ‘এনকাউন্টারে’ই সিলমোহর দিলেন। নির্দ্বিধায় বললেন, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করার জন্য উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, অসমে গুলি করে মারা হয়েছে এই ধরনের মানুষকে। এ রাজ্যে এমন ঘটনা ঠেকানোরই মুরোদ নেই। যারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে, আমরা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে তাদের গুলি করে মারব।
এটা একজন জনপ্রতিনিধির ভাষা? অনেক নেতানেত্রীই আছেন, যাঁরা সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়ানোর জন্য এ ধরনের মন্তব্য করেই থাকেন। সিপিএমে থাকাকালীন রেজ্জাক মোল্লা বা তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডল এমন মন্তব্য করেই তাঁদের এলাকায় জনপ্রিয়তার ‘শিখরে’ চড়েছেন। কিন্তু তাঁরা কেউ অন্তত সাধারণ মানুষকে গুলি করে মারার নিদান জনসভায় দাঁড়িয়ে দেননি। এমনিতেই মাঝে মাঝে বেফাঁস বলেই থাকেন তিনি। গোরুর দুধে সোনার ভাগ থাকে বলে মন্তব্য করেছিলেন দিলীপবাবু। বলেছিলেন, সেই কারণেই রংটা হলদেটে হয়। এই মন্তব্য তাঁর চিরকালীন ‘হিট’। বক্তব্য এ ধরনের কিছুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও হতো। কিন্তু গুলি করে মারার হিটলারি মনোভাব কি আদৌ তাঁর জনপ্রিয়তা ধরে রাখবে? নাকি এতে বিজেপির কিছু ডিভিডেন্ড আসবে?
রাজ্য সভাপতি বলেছেন। কাজেই তাঁকে অনুসরণ করার মতো নেতাও বিজেপিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। যার নবতম সংস্করণ সৌমিত্র খাঁ। সম্প্রতি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসির বিরোধিতায় পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন শিল্পীর একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। তাতে শিল্পীরা বলছেন, তাঁরা কাগজ দেখাবেন না। এটাই প্রতিবাদ। অথচ এই গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের বিরোধিতাকে রাস্তার খেউরের পর্যায়ে নিয়ে গেলেন সৌমিত্রবাবু। বললেন, ‘আপনারা লাজলজ্জাহীনের মতো কথা বলছেন। আপনারা ধান্দাবাজ।’ এমনকী অশালীন বহু কথাও তিনি লিখেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যে দল পরপর দু’বার কেন্দ্রে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, যারা দেশে আচ্ছে দিন নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আরও একটু সংযত হওয়ার প্রয়োজন আছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন জানা নেই। আর তাই দায়িত্বটা অনেক বেশি দিলীপবাবুর। তাঁর কাছে একটাই অনুরোধ, লাগামের কথা একটু ভাবুন। আর মর্যাদা দিন মানুষের প্রত্যাশা, ভোটারের আস্থাকেও।