কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
প্রকৃতপক্ষে জেটগতির এই যুগে আর্থ-সামাজিক অবস্থায় কাঠিন্য, নির্মমতা, আত্মকেন্দ্রিক ভাব মনের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির দরজাগুলো অনেকাংশে বন্ধ করে দিয়েছে। সেই কারণে, আমরা সুকোমল বৃত্তিগুলোকে একপ্রকার প্রায় ভুলতে বসেছি, বা ভুলে গিয়েছি। সামান্য যে দু’একজন এখনও এগুলোকে ধরে রেখেছেন, তাঁরা থেকে যান সাধারণের ভিড়ে। এরকমই একজন ব্যক্তি হলেন হাওড়ার নরসিংহ দত্ত রোডের বাসিন্দা শঙ্কর পাছাল। যিনি কর্তব্যবোধ এবং মানবিকতার অনন্য নজির গড়ে তুললেন। পেশায় তিনি শববাহী যানের চালক। হাওড়ার অর্থোপেডিক হাসপাতালে মৃত এক ব্যক্তির দেহ নিয়ে মৃতের বাড়ি হয়ে বাঁধাঘাট শ্মশান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কাজ করছিলেন তিনি। এরমধ্যেই নিজের মাতৃবিয়োগের খবর পান শঙ্করবাবু। তারপরও তিনি মাঝপথে বাড়ির পথ ধরেননি। বাড়ি থেকে খবর এলে বলেন, আমি শ্মশানে দেহ নামিয়ে আসছি।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাড়ির লোকেরা বিষয়টি জানার পর তাঁকে চলে যেতে বললেও তিনি রাজি হননি। তিনি নাকি বলেন, আমি যখন দেহ গাড়িতে তুলেছি, তখন শ্মশান পর্যন্ত পোঁছে দিয়েই যাব। আমার মতো আপনাদেরও খারাপ সময় এখন। এই সময়ে আপনারা নতুন করে সমস্যায় পড়ুন, চাই না। শেষপর্যন্ত তিনি বাঁধাঘাট শ্মশানে দেহ নামিয়ে বাড়ি ফেরেন। এক সাধারণ মানুষের এমন কর্তব্যনিষ্ঠা এবং মানবিকতাবোধ দেখে ধন্য ধন্য করছেন দু’টি শবযাত্রায় শামিল প্রতিবেশী, পরিজন থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। করাটাই তো উচিত। একটি পরিবার যখন স্বজন হারানোর ফলে শোকে আচ্ছন্ন এবং শবযানে মরদেহ তোলা হয়ে গিয়েছে তখন সেই অবস্থায় যে শঙ্করবাবু তাঁদের মাঝদরিয়ায় ফেলে চলে যাননি, তার জন্য তাঁকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।
কিন্তু, চারপাশের জগতে এরকম বড় মনের মানুষ ক’জন মেলে? কারণ প্রথমত, একান্নবর্তী পরিবারের ভাঙন। একান্নবর্তী পরিবার ছোট থেকেই মানুষকে সুখদুঃখের যৌথ ভাগীদার করে তোলে। কিন্তু, অনু-পরিবারে অনেকসময়েই আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপরতা জন্ম নেয়। দ্বিতীয়ত, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি। যে কারণে জন্মের পর থেকে একটি সন্তান শুধুমাত্র প্রতিযোগিতায় জয়লাভের জন্য দৌড়ঝাঁপ করে বেড়ায়। প্রথম দিকে পড়াশোনা, পরের দিকে চাকরি। এই ইঁদুরদৌড়ে ছুটতে ছুটতে অনেকসময় হারিয়ে ফেলে সে মানবিক সত্তা। অনেককেই সে যেন অবদমিত মনে শত্রু বলে চিহ্নিত করে ফেলে, অথবা তাঁর প্রতিযোগী। তৃতীয়ত, নৈতিকতাবোধের আত্মবিসর্জন। যার মূলে রয়েছে অসীম একাকীত্ব। আমি এবং আমাকে নিয়ে গড়ে তোলা একটি বৃত্তের বাইরে না বেরতে পারার সীমাবদ্ধতাই জগৎ থেকে নিজেকে ছিন্ন করে রাখার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এইসব কারণেই প্রয়োজনে আমরা অনেকেই গুটিয়ে রাখি নিজেকে। শঙ্করবাবু যা করেননি, বলা ভালো করতে পারেননি। আশা করা যায়, তাঁর এই কাজ সকলের কাছে ভালো কাজের একটা নিদর্শন হয়ে থাকবে। হাতেকলমে না হোক, মানুষের মনের আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা তাঁর জন্য নিশ্চয়ই ঝরে পড়বে।