কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
এতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। দেশের মানুষের কাছে পুণ্যভূমি বেলুড় মঠ। বাঙালির কাছে বেলুড় মঠ ধর্মস্থান। এক পবিত্র ভূমি। সারা বছর ধরে এখানে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন প্রাণের শান্তি খুঁজতে। সেখানে দাঁড়িয়ে এই ধরনের রাজনীতির কথা বলা প্রধানমন্ত্রীর উচিত হয়েছে কি? তাঁর তো রাজনৈতিক বক্তৃতার মঞ্চের অভাব হয়নি! তাই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কেন তিনি এভাবে স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্নের ভূমিতে দাঁড়িয়ে রাজনীতির বার্তা ছড়িয়ে দিলেন। আসলে মোদি জানেন এরাজ্যের মানুষ সিএএ-র বিরোধী। রাজ্যের সর্বত্র তীব্র আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনের ঝাঁঝ এড়াতে তাঁকে আকাশপথে এবং জলপথে সফর করতে হয়েছে। কিন্তু বাংলায় এসে সিএএ নিয়ে কথা যেন বলতেই হবে তাঁকে। তাই তিনি বেছে নিলেন বেলুড় মঠকে। এখানেই বহুজনের আপত্তি। সেটা যেমন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আপত্তির বিষয়, তেমনই বহু রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ভক্তেরও তা অপছন্দ লেগেছে। বহু ভক্ত এবং মিশনের প্রাক্তনী প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের তীব্র সমালোচনা করেছেন। অনেকের মতে, তিনি এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী হয়ে, গেলেন একজন রাজনৈতিক নেতা হয়ে।
মঠ ও মিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নরেন্দ্র মোদি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া অবশ্য মঠের পক্ষ থেকে এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলা হয়নি। তাঁরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের অতিথি ছিলেন। তাই তাঁর বক্তব্য সম্পর্কে কোনও নেতিবাচক কথা বলা ‘হোস্ট’দের পক্ষে সম্ভব নয়। সন্ন্যাসীরা যথার্থ কথাই বলেছেন। সন্ন্যাসীদের গেরুয়া এবং রাজনীতির গেরুয়া কখনওই এক নয়। দুটো কখনোই মেলে না। সন্ন্যাসীদের গেরুয়ায় যে আধ্যাত্মিকতা এবং পবিত্রতা আছে, তা রাজনীতির গেরুয়ায় নেই। কিন্তু বেলুড় মঠকে রাজনীতির মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করলেও সেখানকার অতিথি হওয়ার সুবাদে তাঁদের পক্ষে কিছু বলাটা সত্যিই সংস্কৃতিবিরোধী। স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্নের ভূমিতে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক বার্তা ছড়ানোর প্রেক্ষিতে স্বামীজিরই একটি বাণী স্মরণ করা যেতেই পারে। স্বামীজি বলেছিলেন, চালাকির দ্বারা কোনও মহৎ কার্য সিদ্ধ হয় না। এটা সকলের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।
অপর এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, কলকাতা বন্দরের নাম শ্যামাপ্রসাদের নামে হবে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে আদর্শ বলে ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী হিন্দুত্বের প্রসারের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। বিতর্ক শুরু হয়েছে নামকরণকে কেন্দ্র করেও। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে নামকরণের রাজনীতির দিকেই যে তাদের প্রীতি, সেটা বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে। হিন্দুত্বের প্রসারে এবং প্রচারে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরাই অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। এর বিরুদ্ধেও প্রতিবাদমুখর একটা শ্রেণী। এমনকী প্রতিবাদ জানিয়েছেন শ্যামাপ্রসাদের ভাইপো তথা কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছেন, তাঁর মেজোকাকা যে রাজনীতি করেছিলেন, আর এখন বিজেপি যে রাজনীতি করছে, তা এক নয়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর কলকাতা সফরে বিক্ষোভ, কালো পতাকা, গোব্যাক স্লোগানের সরাসরি মুখোমুখি হননি। যদিও বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন, গোব্যাক স্লোগানও দিয়েছিলেন। শহরের কিছু কিছু অংশে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। সেটাকে জয় করার পরিবর্তে তিনি তাঁর বক্তৃতার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মনে আরও বেশি অসন্তোষ তৈরি করে গেলেন।