কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল, তা তর্কসাপেক্ষ। যদিও আপাতদৃষ্টিতে এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলেই মনে হয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষকে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া... এটাই ছিল নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের প্রচার। এবং দাবিও বটে। কিন্তু মুখে বললাম, অধিকার দেব, অথচ নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করলাম... এটা তো হতে পারে না! বলা হল, কর্মসংস্থান বাড়বে। অথচ লাগাতার ১৪৪ ধারা জারি করে মানুষকে কাজ করার অধিকার থেকেই বঞ্চিত করলাম! সমগ্র বিষয়টিকেই মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে তুলনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
যুক্তিটা ছিল, ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে পাকিস্তান। তাই তারা সুযোগ পেলেই কাশ্মীরে আক্রমণ করবে। সোশ্যাল মিডিয়াকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কাশ্মীর উত্তপ্ত করে তুলবে। পাশাপাশি ইন্টারনেট চালু থাকলে অভ্যন্তরীণ অশান্তিও বাড়বে। গুজব ছড়াবে। আর নেপথ্য কারণ হল, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সে সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তাই প্রথম থেকেই লাগাম পরিয়ে দেওয়া ভালো। ইন্টারনেট, ফোন, মেসেজ কিছুই না থাকলে সমস্যাও থাকবে না। বেশ কয়েকদিন পাঁয়তারা কষার পর মোবাইল সংযোগ চালু হল। তাও পোস্ট পেইড। আর ইন্টারনেট এখনও না। তার উপর লাগাতার ১৪৪ ধারা চলছে। মানুষ কাজে যেতে পারছে না, দোকান খুলছে না, সামাজিক জীবন যাপন করতে পারছে না... এই জম্মু-কাশ্মীরই কি উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রের? এই কারণেই কি ৩৭০ অনুচ্ছেদ এত ঘটা করে খারিজ করেছে মোদি সরকার?
কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্যই বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে তার থেকেও বড় চমক হল, ইন্টারনেট ব্যবহার এবং তার মাধ্যমে মত প্রকাশকে মৌলিক অধিকারের আওতায় নিয়ে আসা। সংবিধানের ১৯(১)(এ) ধারায় বিবৃত নাগরিক অধিকারের প্রসঙ্গ টেনে ইন্টারনেট ব্যবহারকে ব্যাখ্যা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে কেরল হাইকোর্ট শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাকে মৌলিক অধিকারের আওতাভুক্ত করেছিল। অর্থাৎ, উস্কানি ছড়াতে পারে এই অজুহাত দিয়ে অন্তত মৌলিক অধিকার খর্ব করা যায় না। কোথাও কোনও গণ্ডগোল হলে রাষ্ট্র মনে করতে পারে, ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংক্রান্ত উস্কানি বা গুজব ছড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তার খাতিরে কিছু সময়ের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হতে পারে। কিন্তু তা অনির্দিষ্টকালীন হওয়াটা কাজের কথা নয়। যা কাশ্মীরে হয়েছে। এটা আসলে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নয়? রাষ্ট্র যদি তার সুনাগরিকদের যথাযথ নিরাপত্তা দিতে পারত, তাহলে কি এভাবে অধিকারে হস্তক্ষেপ হতো? প্রত্যেক নাগরিক সন্দেহের কামানের মুখে থাকতে পারে না। সেটা তাহলে গণতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতা। বিরুদ্ধ প্রচার হতেই পারে। সেটাও একটা মত। সেই মত প্রকাশেরও স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। সরকার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করবে তার কাজের মধ্য দিয়ে। বিরুদ্ধ মতকে অবদমিত করে আর যাই হোক, সুশাসক হওয়া যায় না।