কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
বৃহস্পতিবার দুপুরে নৈহাটিতে যে বিস্ফোরণ ঘটে তার তীব্রতা এতটাই জোরাল ছিল যে, ওপারে চুঁচুড়া শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরই নৈহাটির ওই এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ঘটনার গভীরতা আন্দাজ করে পুলিস এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। মানুষের ক্ষোভের আঁচ গিয়ে পড়ে পুলিসের গাড়িতে। ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের দু’টি গাড়ি। বিস্ফোরণের জেরে দুই শিশু সহ তিন জন গুরুতর জখম হয়েছে। পুলিসের দাবি, বাজেয়াপ্ত বাজিই গত চারদিন ধরে নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া চলছিল। গঙ্গা তীরবর্তী ছাইঘাটে একটি ৭ ফুটের গর্তে এই কাজ চলছিল। যদিও এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাজির সঙ্গে বোমাও ছিল। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে শ্যামনগর থেকে নৈহাটি, কাঁচরাপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। বিভিন্ন পাড়ার প্রায় ৪০০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শুধু নৈহাটির দিকেই নয়, ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গঙ্গার উল্টোপাড়ের চুঁচুড়া শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। প্রায় ১০ কিমি দূরের ময়নাডাঙা এলাকা পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। কম্পন অনুভূত হয় ব্যান্ডেলেও। বিস্ফোরণের তীব্রতায় গঙ্গা তীরবর্তী বাড়িগুলির জানালা দরজার কাচ ভেঙে পড়ে, ফাটল ধরে দেওয়ালে, দরজায়। ইমামবাড়া হাসপাতাল, ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের ভবন সহ অন্তত চারটি সরকারি ভবন ও ৬০০ বাড়ি ওই ঘটনায় কমবেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রবল শব্দ ও কম্পনের উৎস আঁচ করতে না পেরে জেলা আদালত, জেলা পরিষদ ভবনে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। অনেকেই ভূমিকম্পের আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।
আরও মারাত্মক ঘটনা হল, বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার জায়গা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে একটি স্কুল চলছিল। যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ৭০০। তীব্র কম্পনে স্কুলের সিলিং ভেঙে পড়ে। বরাত জোরে মিড ডে মিল খাওয়ার জন্য খুদে পড়ুয়ারা তখন বাইরে ছিল। না হলে আরও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। স্কুল ছুটি না দিয়ে কীভাবে কয়েকদিন ধরে এরকম একটি বিপজ্জনক কাজ চলছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। জনবসতি এলাকার মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য নিষ্ক্রিয় করা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি তুলেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু, অভিযোগ পুলিস কারও কথায় কান দেয়নি। সঠিক পদ্ধতি মেনে বিস্ফোরক দ্রব্য নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছিল না, তা মেনে নিয়েছেন নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায়ও।
বিশেষত ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশ্রিত যে কোনও সামগ্রী নষ্ট করতে হলদিয়ার নির্দিষ্ট ‘ক্ষতিকারক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিটে’ পাঠানোর নিয়ম। এ ধরনের আইন বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এই কাজ করা হচ্ছিল। পরিবেশবিদদের মতে, এর জেরে ওই এলাকার গঙ্গার মাটি এবং জল মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে। সেই ক্ষতিও খতিয়ে দেখা দরকার। বিস্ফোরণের পর সৃষ্টি হওয়া বায়ু দূষণ, সামগ্রিক পরিবেশ নষ্ট করেছে। আইনরক্ষকের এরকম কাজ কোনওভাবেই কাম্য নয় বলে তাঁরা মনে করেন।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিধিতে রয়েছে, যে সমস্ত বর্জ্যতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক বা ধাতু রয়েছে, সেগুলি কোনওভাবেই শহুরে এলাকা বা কোনও কঠিন বর্জ্য ফেলা হয়, এরকম জায়গায় নষ্ট করা যাবে না। পরিবেশবিদদের ক্ষোভ, পুলিস যে এখনও বাজি নষ্ট করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আইন মানছে না, তা নৈহাটির ঘটনার পর স্পষ্ট। তাঁদের দাবি, গোটা ঘটনায় আইন লঙ্ঘন হয়েছে, পরিবেশ দূষিত হয়েছে। এবিষয়ে পর্ষদের উচিত যথাযথ পদক্ষেপ করা।
যথারীতি এই ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। অন্য একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকাকালীন তাঁর কানে এই সংবাদ পৌঁছনো মাত্র তিনি ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু, বিরোধী দলগুলি অবশ্য এই সুযোগে কাদা ঘোলা করতে মাঠে নেমে পড়েছে। এরকম হাতেগরম সুযোগকে হাতছাড়া করতে চায়নি বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএমও। সুতরাং, সব শেষে বলা যায়— নিন্দা, সমালোচনা, শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই সব ভুলের অন্ত হতে পারে না। এ বিষয়ে আরও সজাগ হওয়া উচিত ছিল, ভবিষ্যতেও সজাগ থাকতে হবে।