বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ধর্মঘট, বন্ধ বা হরতাল, এসব নতুন কিছু নয়। পরাধীন ভারতবর্ষেও এই অস্ত্রটির ব্যবহার হয়েছে। ইংরেজ শাসকদের নানা অন্যায় এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বহুবার পালিত হয়েছে হরতাল। স্বাধীন ভারতেও এর প্রয়োগ ঘটেছে বহুবার। কারণ বন্ধ বা সাধারণ ধর্মঘট যে কোনও প্রতিবাদের হাতিয়ার। সর্বশেষ অস্ত্র। তাই শেষ অস্ত্রটি প্রয়োগের আগে প্রতিবাদকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। আর তার আগেই ধর্মঘট ডাকলে প্রতিবাদের সর্বশেষ অস্ত্রটির প্রয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন জাগে। তখন অনেকেই মনে করে, রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার জন্যই ধর্মঘটের ডাক। বুধবারের সাধারণ ধর্মঘটকে অনেকে তেমনই একটা চেষ্টা বলে মনে করছেন। আর প্রতিবাদের সর্বশেষ অস্ত্র প্রয়োগের ক্ষেত্রে বামেদের দেশজোড়া খ্যাতি আছে। ক্রমাগত রক্তক্ষরণে রুগ্ন বামেরা ফের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার আশায় আরও একটি সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়ে তাদের রেকর্ড উজ্জ্বল করল। বাম ও কংগ্রেস সহ ১০টি ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন সিএএ, এনআরসি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ প্রভৃতির প্রতিবাদে দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। মোটের উপর বিজেপি বাদ দিয়ে প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দল এই ইস্যুগুলির সঙ্গে সহমত পোষণ করে। এমনকী, এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই এই ইস্যুগুলিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু, সাধারণ ধর্মঘটের বিরোধিতা করেছেন। কারণ বন্ধ মানুষের যন্ত্রণা নিরসন করে না, যন্ত্রণা বাড়ায়। বিশেষ করে গরিব খেটে খাওয়া মানুষের। এরাজ্যের মানুষ বামজমানায় বিরোধীদের তো বটেই, সরকার পোষিত ধর্মঘটও প্রত্যক্ষ করেছে। বাম জমানায় ধর্মঘট বা বন্ধ সরকারি কর্মচারীদের কাছে ছিল একটি অতিরিক্ত সরকারি ছুটির দিন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় বসে সেই ধারণা বদলে দিয়েছেন। কারণ তিনি ঘোষণা করেছেন, ধর্মঘটের দিন অফিসে হাজির না থাকলে কাটা যাবে বেতন। এই নিয়ম কার্যকর করতেই ধর্মঘটের দিন সরকারি অফিসগুলিতে হাজিরা প্রায় স্বাভাবিকই থাকে। বুধবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এদিন সরকারি অফিসে হাজিরা ছিল ৯৫ শতাংশ। তার মানে এই নয়, এই ৯৫ শতাংশ মানুষই যে ইস্যুতে সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে। বরং বলা ভালো, কাজের জায়গায় উপস্থিত থেকে তাঁরা প্রতিবাদ জানানোর পদ্ধতিটিরই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এবার সাধারণ ধর্মঘটের ক্ষতির দিকে একটু তাকানো যাক। দোকানপাট বন্ধ থাকায় ব্যবসা মার খেয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ বহু কোটি টাকা। খেটে খাওয়া মানুষের একদিনের মজুরি মার খেয়েছে। ধর্মঘট সফল করার জন্য বাম এবং কংগ্রেস সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করায় লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। ধর্মঘটের দিন রাস্তায় বাস এবং গাড়ি নামানোর সাহস দেখানোয় ১৩টি সরকারি বাসে এবং অসংখ্য বেসরকারি বাস ও গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এই ক্ষতি আপাতত দৃষ্টিতে সরকারের হয়েছে বলে
মনে হচ্ছে। কিন্তু, বাস্তবে আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছি।
কারণ ক্ষতির টাকা বিমা কোম্পানি বা রাজ্য সরকার যেই দিক না কেন,
যাবে সেই আমাদের পকেট থেকেই। এই সত্যিটা রাজনৈতিক দলগুলি
এবং তাদের সমর্থকরা যতদিন না বুঝবেন ততদিন বন্ধ নিয়ে বন্ধ্যা রাজনীতি বন্ধ হবে না।