কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালিসিস (আরআরএজি)। একটি বেসরকারি সংগঠন। কাজ করে মানবাধিকার নিয়ে। অসমে এনআরসি-পীড়নের শিকার মানুষজনের উপর তারা একটি সমীক্ষা করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের সেই রিপোর্টে এই চিত্রটি উঠে এসেছে। বহু কৌণিক ওই সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে আরও জানা গিয়েছে, নাম তোলার চেষ্টায় নেমে এক-একজনকে গড়পড়তা উনিশ-কুড়ি হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কোনও পরিবারের যদি সদস্য সংখ্যা পাঁচ বা দশজন কিংবা আরও বেশি হয় তো ভাবুন কী খরচের ধাক্কা তাদের উপর নামিয়ে আনা হয়েছে—এক থেকে দুই লক্ষ বা আরও বেশি টাকা! আমরা জানি, ভারতের নাগরিকত্ব দাবি করে অসমের মানুষ প্রথমে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আবেদন করেছিলেন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায়, ৪১ লক্ষাধিক মানুষের নাম তাতে নেই! তখন তাঁদেরকে আরও উপযুক্ত কিছু নথি জোগাড় করে পুনরায় আবেদন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে গত বছরের মাঝামাঝি যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে ১৯ লক্ষাধিক নরনারী বাদ পড়ে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হিন্দুই ১২ লক্ষাধিক! এবার তাঁদের আরও কিছু উপযুক্ত নথি এবং রক্তের সম্পর্কযুক্ত সাক্ষীদের সমেত ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার ফরমান জারি করা হয়েছে। আরআরএজির এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নাগরিকত্ব প্রমাণে যদি মাথাপিছু ১৯ হাজার টাকাও খরচ হয়ে থাকে তো ৪১ লক্ষ মানুষের জন্য কত খরচ হয়ে গিয়েছে তা ভেবে দেখতে হবে। সত্যিই তো, সর্বমোট সাত-আট হাজার কোটি টাকা। কষ্টার্জিত অর্থের কী অন্যায় অপচয়!
আর এই টাকা তো আকাশ থেকে পড়েনি। ভিকটিমদের বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত বা গরিব মানুষ। কারও ক্ষেত্রে বিক্রি হয়ে গিয়েছে সামান্য চাষের জমি, এমনকী ভিটেবাড়িটুকুও! কেউ-বা বেচে দিয়েছেন গয়নাগাঁটি, খুইয়েছেন ব্যাঙ্কসঞ্চয়ের সবটুকুই। যাঁদের এটুকুও সম্বল নেই, তাঁদের গলা অবধি ডুবে গিয়েছে দেনায় দেনায়! চিন্তায় চিন্তায় ঘুম ছুটে গিয়েছে প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি পরিবারের, প্রতিটি মহল্লার। আতঙ্কে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এমনকী মারাও গিয়েছেন। এই অবাঞ্ছিত তাড়নায় পড়ে কত পরিবারের চাষ-আবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি লাটে ওঠার জোগাড় হয়েছে। বিবাহসহ আরও সমস্ত সামাজিক আনন্দানুষ্ঠান মাটি হয়ে যাচ্ছে। সোজা কথায়, অসমে বসবাসকারী হিন্দু মুসলমান প্রতিটি বাঙালির জীবনে চরম দুঃখের এক অধ্যায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অসম এমনিতেই একটি পিছিয়ে পড়া রাজ্য। হলফ করে বলা যায়, কংস রাজার এই বদ ফরমাস তামিল করতে গিয়ে অসম আরও পিছিয়ে পড়ছে। এনআরসি কার্যকর করার মাশুল গুনতে হবে অসমের অর্থনীতিকেই। কারণ, এই ঘটনার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ছে অসমের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, পর্যটন সবকিছুরই উপর। অসমকে দেখেই শিক্ষা নিক সারা ভারত। এই অভিশাপ সারা দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া হলে ভারতের নিমজ্জমান অর্থনীতির ঠাঁই অতলেও হবে না। তাই বাংলার মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদৃষ্টির তারিফ করতেই হচ্ছে। এনআরসির প্রশ্নে সারাদেশকে তিনিই সবার আগে সাবধান করেছেন। এনআরসি রুখে দিতে আজও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি।