সাধারণ মানুষ বিশেষত গরিব মধ্যবিত্ত শ্রেণী এই মুহূর্তে যে সমস্যাটিতে জেরবার হচ্ছে তা হল সাম্প্রতিক বাজার দর। দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে এমনিতেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। হাতে নগদ টাকার অভাব। তার উপর খুব সাধারণ সব্জি আনাজপাতি কিনতে গিয়ে হাতে ছ্যাঁকা লাগার জোগাড়। শীতের সব্জিগুলি সবে উঠতে শুরু করেছে। এসময় সাধারণভাবে আনাজপাতির দাম একটু কম হওয়ারই কথা। কারণ, পুজোর মরশুম চলে গিয়েছে। বুলবুল চলে যাওয়ার পর থেকে আবহাওয়াও মন্দ নয়। কিন্তু, নানা যুক্তি দেখিয়ে সেই যে সব্জির দাম চড়ে বসে আছে তা কমার নামগন্ধ নেই। আর, যেসব সব্জির দাম একটু হয়তো কমেছে তাও খুব যে আহামরি, এমনটা নয়। ফলে, বাজারে গিয়ে অত্যন্ত হিসেব-নিকেশ করেই এগতে বা দরাদরি করতে হচ্ছে মানুষকে। কিছু ক্ষেত্রে লাগামছাড়া সব্জির দাম মানুষের ধরাছোঁয়ার একেবারে বাইরে। তবে, একদিনে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কারণ যাই হোক সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে যাতে ফড়েরা ফায়দা লুটতে না-পারে তার জন্য দরকার ছিল আগাম নজরদারির। যে-সময় এই নজরদারির কাজটা শুরু করার দরকার ছিল তা সময়মতো না-হওয়ার কারণে বাজার দর চড়ে রয়েছে। অর্থাৎ, টনক নড়েছে দেরিতে। তাও আবার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারির পর। বলা যায়, তার পরই সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন।
দেখা যাচ্ছে, একই পাইকারি বাজার থেকে কাঁচা আনাজ কিনে এক-একজন খুচরো ব্যবসায়ী এক-এক রকম দাম হাঁকছেন। বাজার ভেদেও দামের বিস্তর হেরফের ঘটছে। প্রশ্ন হল, দামের এমন পার্থক্যই-বা থাকবে কেন? এর কোনও যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর মিলছে না। মুখ্যমন্ত্রীর গড়া টাস্কফোর্স ও পুলিসের এনফোর্সমেন্ট শাখার অফিসারদের হানাদারিতেও এমন তথ্যই মিলেছে। কোথাও হয়তো তাঁরা দোকানদারকে বাধ্য করেছেন ক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া বাড়তি টাকা ফেরত দিতে। কোথাও আবার আনাজ ব্যবসায়ী অফিসারদের জেরা এড়াতে দোকান ফেলে লুকিয়ে পড়েছেন অথবা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বেশি দাম নেওয়ার যুক্তি হিসেবে উল্টোপাল্টা বকেছেন। টাস্কফোর্স এবং এনফোর্সমেন্টের এই উদ্যোগে পথচলতি মানুষ নিঃসন্দেহে মনে একটু বল ভরসা পাচ্ছেন। ন্যায্য দামে জিনিসপত্র বিক্রি হবে এমন আশাও হয়তো জাগছে তাঁদের মনে। একথা ঠিক, সব্জি কিনতে গিয়ে দামের জন্য যে আতঙ্ক মানুষের মনে জাগছে তা দূর করতে এই নজরদারির কাজটা সব বাজারেই আরও বাড়ানো দরকার। আর, এই কাজটা আরও আগে শুরু করা গেলে অন্তত এভাবে সব্জির দর বাড়িয়ে ফড়েরা ফায়দা তোলার সুযোগটুকু পেত না।
তবু বলা যায়, নজরদারি যখন শুরু হয়েছে তখন তার সুফল নিশ্চয় একটা মিলবে। তবে, কাজটা সাময়িকভাবে না-করে বছরভর বা লাগাতার করা প্রয়োজন। কারণ, এটা শুধুমাত্র ক’দিনের জন্য বা দু-একমাসের সমস্যা নয়। প্রায়ই দেখা যায়, কোনও কিছু হলেই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে নানা ছুতোয় হুটহাট সব্জি ইত্যাদির দাম বাড়িয়ে দেয়। কোনও পুজোআচ্চা থাকলে তো কথাই নেই। সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায্যমূল্যের সব্জি কিনতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে সরকারিভাবে ‘সুফল বাংলা’ স্টলের মাধ্যমে তা বিক্রির ব্যবস্থা করেছে মমতার সরকার। কিন্তু, সেখানে তাজা সব্জির জোগান যাতে ঠিকমতো থাকে সেদিকেও নজর দেওয়া উচিত। আর এই নজরদারির কাজটা যথাযথ হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবে না। তাই, কড়া হাতেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।