নতুন কোনও কর্ম পরিকল্পনায় সাফল্যের ইঙ্গিত। লটারি বা ফাটকায় প্রাপ্তি যোগ। খেলাধূলায় কৃতিত্ব। বাক্যে ও ... বিশদ
মেট্রো রেলের ক্রমবিস্তারের এই ধারা থেকে এটাই পরিষ্কার যে, সব বড় শহরের কাছে পরিবহণের এই মাধ্যমের আকর্ষণ দুর্নিবার। নাগরিক পরিবহণ ব্যবস্থা সবদিক থেকে মসৃণ রাখতে আপাতত মেট্রো রেলের বিকল্প মেট্রো রেলই। এটা সবার আগে উপলব্ধি করেছিলেন বাংলার রূপকার বিধানচন্দ্র রায়। ১৯৮৪ সালে কলকাতার বুকে মেট্রো রেল যে ছুটেছিল, সেটা আসলে ড. রায়ের স্বপ্নটাই সাকার হয়ে ওঠা। এর পিছনে তৎকালীন রেলমন্ত্রী গনিখান চৌধুরীর অবদানও স্মরণে রাখতে হয়। পরিতাপের বিষয় হল, আধুনিক পরিবহণের অগ্রপথিক হয়েও বাংলা কিন্তু পিছনে পড়ে রইল। বিশেষত দিল্লি মেট্রোর ধারাবাহিক অগ্রগতির সঙ্গে কলকাতা আর তাল রাখতে পারছে না। নিউ গড়িয়া-এয়ারপোর্ট এবং সল্টলেক-হাওড়া ময়দান দুটি নতুন শাখা নির্মাণ করতে নেমে কলকাতা যে অপেশাদার মনোভাব দেখাচ্ছে তা কাম্য নয়। এই দুটি শাখা নির্মাণের টার্গেট ইতিমধ্যেই একাধিকবার ফেল করেছেন কর্তৃপক্ষ। এই প্রশ্নে কেন্দ্রীয় শাসক বা রেল মন্ত্রকের দিকেই আঙুল উঠবে নিশ্চয়। নিশ্চয় আরও একবার গাওয়া হবে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার পুরনো গীতটাই।
কিন্তু অন্য একটি প্রাসঙ্গিক সত্যও ভেবে দেখার সময় হয়েছে—আমরা, অর্থাৎ কলকাতার সাধারণ মানুষ, যারা মেট্রো চড়ে নিত্য বিশেষ আরাম অনুভব করি, তারা কি ততটা যোগ্য হয়ে উঠেছি? লোকাল ট্রেনে বাসে ট্রামের ভাড়ায় যেমন দু-দশ টাকা ফাঁকি দিতে পারলেই অনেক লাভ করে ফেললাম ভাবি—সেই মানসিকতা মেট্রো রেলে চড়ার সময়েও বদলাতে পারি না অনেকেই। হ্যাঁ পাঠক, আপনি ভুল শুনছেন না। মেট্রো রেলে চড়ার আগে পরে এত কড়াকড়িকেও বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে অবলীলায়—এই কলকাতায়। হয়তো আত্মপ্রসাদ লাভ করছি—আমরা এই ব্যাপারেও সারা ভারতের থেকে এগিয়ে! সদ্য সমাপ্ত উৎসবের মরশুমে ভাড়া/টিকিটের খতিয়ান নিতে গিয়ে কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের তো চক্ষু চড়কগাছ—ক’দিন আগে পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার টোকেন খোয়া গিয়েছে! টোকেন খোয়া গিয়েছিল আগস্টে প্রায় ১৭ হাজার। সংখ্যাটি সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২২ হাজার। সম্প্রতি তার সঙ্গে আরও যোগ হয়েছে ১৩ হাজার টোকেন হারানোর বিস্ময়! এর একটি বড় কারণ যে বিনা ভাড়ার যাত্রীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি, তা বুঝতে পারা যাচ্ছে। অথচ কলকাতা মেট্রোয় ন্যূনতম ভাড়া (৫ টাকা) সাধারণ বাস বা অটো ভাড়ার (৭-৮ টাকা) থেকেও কম! উল্লেখ্য, দিল্লি মেট্রোর ন্যূনতম ভাড়া ১০ টাকা। এত আরামে যাতায়াত করেও যে শহরবাসীর সামান্য ৫ টাকা ফাঁকি দেওয়ার রুচি হয় সেই শহর এই ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা পাওয়ার কতটা যোগ্য? আজ যদি রেল কর্তৃপক্ষ এই মৌলিক প্রশ্নটি রাখেন তবে সেটা কি খুব অবমাননাকর হবে? নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়ুল মারছি না তো? এটা ভেবে দেখতে হবে শহরবাসীকেই।