নতুন কোনও কর্ম পরিকল্পনায় সাফল্যের ইঙ্গিত। লটারি বা ফাটকায় প্রাপ্তি যোগ। খেলাধূলায় কৃতিত্ব। বাক্যে ও ... বিশদ
এই কলঙ্ক থেকে দেশকে উদ্ধারের একটি কার্যকরী পদক্ষেপের নাম মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (এমজিএনআরইজিএ), ২০০৫। এই আইন অনুসারে মনমোহন সিংয়ের সরকার ২০০৬ সালের গোড়ায় যে কর্মসূচি নিয়েছিল তার মোদ্দা কথা ছিল—গ্রাম-ভারতের সবচেয়ে গরিব পরিবারগুলির জন্য বছরে অন্তত ১০০ দিনের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়া। কর্মসূচিটি ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নামে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সরকারি উদ্যোগে বছরে অন্তত ১০০ দিনের কাজের ব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী ভাবনা। প্রকল্পটি চালু হতেই দেশজুড়ে সাড়া পড়ে যায়। প্রকল্পটির একাধিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও হত দরিদ্র পরিবারগুলি হঠাৎ হেসে ওঠে। গ্রাম-ভারতের অর্থনীতিতে এই পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাবটি স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে থাকে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট, ২০১৪-য় কর্মসূচিটিকে ‘স্টেলার এক্সাম্পেল অফ রুরাল ডেভেলপমেন্ট’ নামে অভিহিত করা হয়। কিন্তু, পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ করা যায়, ভারত আছে ভারতেই। গরিবের অন্নেও চোরের হাত প্রসারিত হল দিকে দিকে। এই প্রকল্পের জব কার্ড পাইয়ে দেওয়ার নামে নানাবিধ জালজোচ্চুরি হল। অনেক জায়গায় প্রকৃত গরিবদের অন্ধকারে রেখে সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে এই কার্ড ইস্যু করা হল। কোনও কাজ না-করেই তারা ভুয়ো বিল তৈরির মাধ্যমে গরিবের প্রাপ্য অর্থ আত্মসাৎ করতে লাগল। তার ফলে অনেক জায়গায় গরিব গরিবই রয়ে গেল, সচ্ছল পরিবার আরও পয়সার মালিক হতে থাকল। গরিবের হাতে কিছু পয়সা দেওয়ার আর একটি উদ্দেশ্য ছিল গ্রাম দেশে কিছু সম্পদেরও সৃষ্টি। কিন্তু সীমাহীন দুর্নীতির কারণে গ্রাম-ভারত সম্পদ সৃষ্টির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হল। অর্থাৎ রাজনীতি আর প্রশাসনের অসাধু অংশটি দু’ভাবে দেশের ক্ষতি করল।
প্রকল্প রূপায়ণের এই গলদের প্রসঙ্গ টেনে নরেন্দ্র মোদির সরকার এই ব্যাপারে বিশেষ কড়াকড়ি করেছে। তাতে অন্যায় কিছু নেই। দুর্নীতি ঠেকানোই কাম্য। প্রকল্পটিকে স্বচ্ছতার সঙ্গে রূপায়ণ করা গেলে আরও বেশি গরিব মানুষ উপকৃত হবে। গ্রাম গ্রামান্তরের আর্থিক বৈষম্য কমতে থাকবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ এই কর্মসূচির বিস্তারই বরং কাঙ্ক্ষিত। প্রকল্পটিকে হাতিয়ার করে স্থায়ী সম্পদ বৃদ্ধির উপর বেশি করে জোর দেওয়া জরুরি। এইভাবে আরও কয়েক বছর এগিয়ে যেতে পারলে একদিন দারিদ্র্য সত্যিই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, আজকের মতো দারিদ্র্য হয়তো ইতিহাসই হয়ে যাবে। তার পরিবর্তে চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়া তো যায় না! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যা অভিযোগ তা থেকে মনে হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পটির গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে। এখানে গত বছরের তুলনায় উপকৃত পরিবার এবং শ্রমদিবসের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রকল্পটি দারিদ্র্যদূরীকরণের সার্থক হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। বুকে হাত রেখে ‘জয় হিন্দ’ উচ্চারণের জন্য গরিবের আয় বৃদ্ধির বিকল্প কিছু নেই।