কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
মার্কিন অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান্তরালভাবে গত কয়েক দশকে বেড়েছে চীন। প্রায় গোটা বিশ্বে চীনা পণ্য বাজার দখল করেছে। আমেরিকাও এই বিরাট মার্কেটের অন্যতম। উৎপাদন খরচ কম, ফলে বিক্রয়মূল্যও বেশি নয়। পাশাপাশি চটক রয়েছে ষোলোআনা। এর ফলে মার্কিন পণ্যও আমেরিকার বাজারে মার খেতে শুরু করেছে। তার সঙ্গে বাণিজ্যনীতিতে নয়ছয়ের অভিযোগও চীনের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে। গত বছর ট্রাম্প এর একটা পাল্টা চাল দিলেন। চীনের বাণিজ্যের উপর কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার পাশাপাশি চাপালেন চড়া হারে শুল্ক। ‘অস্বচ্ছতা’র যে দাবি তিনি ১৯৮০ সাল থেকে করে এসেছিলেন, তা কার্যকর করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে। লক্ষ্য তাঁর দেশীয় পণ্যের সুযোগ বাড়ানো। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প জানিয়ে রেখেছেন, তাঁর আস্তিনে আরও তাস লুকানো আছে। অর্থাৎ, চীনকে ভাতে মারতে আরও অনেক চেষ্টাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট করবেন। যার প্রভাব পড়বে আম আদমির উপর। ইতিমধ্যেই কৃষি এবং উৎপাদনশিল্পে এর কোপ পড়তে শুরু করেছে। কাঁচামালের দাম বেড়েছে। একটি পণ্যের উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে তার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে। ফলে যে পণ্য গ্রাহক বা ক্রেতার হাতে গিয়ে পৌঁছচ্ছে, তার দাম আগের থেকে অনেক বেশি। এর আফটার-শক দেখা যাচ্ছে শেয়ারবাজারে, অন্য কিছু দেশের অর্থনীতিতেও। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এমনতর শুল্কবৃদ্ধির হুমকি অবশ্য ভারতের দিকেও ছুঁড়ে রেখেছেন ট্রাম্প।
এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির বিরোধিতায় ভারতকে পাশে চাইছে চীন। এই মুহূর্তে চীনের পরেই বিশ্বের বৃহত্তম বাজার ভারতের। যদি এই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালী হয়ে ওঠে, নিঃসন্দেহে চাপ বাড়বে আমেরিকার উপর। ইতিমধ্যেই আমেরিকার পাল্টা একটি জায়ান্ট ফ্রি ট্রেড জোন চুক্তি করার লক্ষ্যে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ নামক সংগঠন তৈরি হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই ওই মঞ্চের বৈঠক। ১৬টি রাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত এই মঞ্চ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক মঞ্চ হতে চলেছে। চীনের নেতৃত্বে ভারত রাজিও হয়েছে। কাজেই ‘ইনফর্মাল বৈঠকে’র মূল বিষয়বস্তু বাণিজ্য সম্পর্ক হলে তাতে কূটনৈতিক সমস্যার কিছু নেই। সন্ত্রাসের ক্ষেত্রেও আলোচনায় ভারত ফ্রন্টফুটেই থাকবে। কিন্তু সমস্যার জায়গা যদি কিছু থেকে থাকে, তা হল পাকিস্তান এবং কাশ্মীর। একদিকে সম্প্রতি জিনপিং পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে এ বিষয়ে স্তুতিবাক্য শুনিয়েছেন। আবার ভারত সফরে আসার আগে ঘটা করে বিবৃতি দিয়েছেন, কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক বিষয়। এখানে তাঁর দেশ মাথা গলাবে না। এই দ্বিচারিতাই আসলে উদ্বেগের ভরকেন্দ্র। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড এবং অন্যান্য পরিকাঠামোগত বিনিয়োগকে সুরক্ষিত করতে পাকিস্তানের বন্ধুত্ব কিন্তু চীন ছাড়বে না। তাই সাম্প্রতিক অতীতেও মাসুদ আজহার, নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ, রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদের মতো ইস্যুতে চীন বিরোধিতা করে গিয়েছে ভারতের। সেক্ষেত্রে আবার পাশে থেকেছে আমেরিকা। এই মুহূর্তে ভারতকেও পাশে প্রয়োজন বলে চীন উল্টো সুর গাইছে।
এই পরিস্থিতিতে চাবিকাঠি নরেন্দ্র মোদির হাতেই। স্বাধীনতার পর থেকে বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করে এসেছে চীন। সেখানে বারাক ওবামার সময় থেকেই আমেরিকা বিশেষ বন্ধু ভারতের। মোদিকে বেছে নিতে হবে, দেশের স্বার্থে কোন বন্ধু তাঁর বেশি প্রিয়। কিংবা এমন একটা সাম্যাবস্থা, যাতে সাপ মরবে, লাঠি ভাঙবে না। আর যাই হোক, বন্ধু সেজে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে চীনের কিন্তু বেশি সময় লাগবে না!