পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
জঙ্গল থেকে ফল, পাতা সহ বিভিন্ন বনজ সম্পদ সংগ্রহ ও তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জেলায় তফসিলি উপজাতিদের বেঁচে থাকা সেই জঙ্গল মহল ও বনজ সম্পদকে ঘিরেই। কিন্তু, দুর্ভাগ্য এই যে, তাঁদের এই হাড়ভাঙা পরিশ্রমের রক্ত শুষে খাচ্ছে একশ্রেণীর ফড়ের দল। অভাবের তাড়নায় ও শিক্ষার অভাবে শহর থেকে নিজেদের স্বেচ্ছা-নির্বাসনে রাখা জঙ্গল এলাকার ওই মানুষরা নিম, হরিতকী, বহেড়া সহ বনজ সম্পদ জোগাড় করে তা অতি সামান্য মূল্যে ফড়েদের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। আর তা বাজারে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করে ফড়েরা। এই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে ১২টি বনজ সম্পদে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। সেই দরে ওই সব জিনিস সরকার কিনে নেবে। ফলে ব্যবসায়ীরা হয় সেই মূল্যে কিংবা তার চেয়ে বেশি মূল্যে তা কিনতে বাধ্য হবে। প্রসঙ্গত, এর আগে রাজ্য সরকার কেন্দু পাতায় এই সহায়ক মূল্য বেঁধে দিয়েছিল। পরে শাল বীজে এই সহায়ক মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়। আরও ১০টি জিনিসে তা বেঁধে দেওয়া হল। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে পুরোদমে এমএফপি ও এমএসপি নামে ওই প্রকল্পে সরকারি স্তরে বনজ সম্পদ কেনা শুরু হবে। সংবাদে প্রকাশ, ওই প্রকল্পে কেন্দ্র সরকারের ৭৫ শতাংশ ও রাজ্য সরকারের ২৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকছে।
এখানেই এই উদ্দেশ্যের শেষ নয়। সংগৃহীত বনজ সম্পদকে বাজারের উপযোগী করার জন্য প্রক্রিয়াকরণের করে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হবে। এমনকী তা সরকারি উদ্যোগে বিক্রি করা হবে। সেই লভ্যাংশ বনবাসীদের উন্নয়নেই ব্যয় করা হবে। নতুন যেগুলিতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—তেঁতুল, মহুয়া পাতা, হরিতকী, নিম বীজ, বহেড়া, বেল, কালমেঘ, আমলকী। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে—এতদিন বছরের পর বছর ধরে যে মানুষগুলি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকেন তাঁদের হাতের কাছে এবার থেকে এক নতুন সুযোগের দরজা খুলে যেতে চলেছে। ফড়েদের উপদ্রব শুধু এখানে নয়, আমাদের চারপাশের গোটা ব্যবস্থারই মজ্জায় মিশে গিয়েছে। তাই শুধু বনবাসী বা পাহাড়বাসীরাই নন, ফসলের ন্যায্য মূল্য পান না ধান চাষি, ফুল চাষি, সব্জি চাষি থেকে মৎস্যজীবী, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প মালিকরাও এই একই ব্যবস্থার শিকার। আর সে কারণেই আজ বাজারে বেরলেই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের হৃদকম্পন শুরু হয়ে যায়। দিন দিন প্রতিটি জিনিসই অগ্নিমূল্য হচ্ছে এই ফড়েদেরই উৎপাতে। এর হাত থেকে পরিত্রাণের উপায় কোথায়! কয়েকদিন আগেও পেঁয়াজের যে আকাশছোঁয়া দাম হয়েছিল, তার পিছনেও ছিল ফড়েদের হাত। ফলে, বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারকে অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তা না হলে আগামী দিনে চাষিরা হয়তো প্রায় বিনি পয়সাতেই ফসল বেচে দিতে বাধ্য হবেন, অথচ আমাদের তা কিনতে হবে সোনার দরে। ফড়েরাজ ধ্বংস করতে সরকারই একমাত্র ব্যবস্থা নিতে পারে। ফসল কেনাবেচার মধ্যস্বত্ত্বভোগের দাঁও মারা এই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক সরকার। আর শুধু দালালরাজের রমরমাই বন্ধ করে দিতে পারলে আর্থিকভাবে অনেক উন্নতি ঘটবে চাষ শিল্প তথা অর্থনীতির।