বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কিন্তু, এই প্রত্যাশা বেশিদিন ধরে রাখা যায়নি। প্রত্যাশার পারদ দ্রুত নেমেছে ২০১৬ সালের নভেম্বরে নোটবন্দির অব্যবহিত পরেই। ওইসঙ্গে যোগ হয়েছে তড়িঘড়ি জিএসটি বলবৎ করার সিদ্ধান্ত। এই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত দুটি গ্রহণের পিছনে দ্রুত কালো টাকা উদ্ধার এবং অধিক রাজস্ব সংগ্রহের মতো সৎ চিন্তা নিশ্চয় ছিল। কিন্তু, এই ‘ফাটকা’য় মোদি সরকারের হার হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে পরিকল্পনাগত একাধিক ত্রুটি। অর্থনীতির পণ্ডিতদের একাংশের বক্তব্য, নোটবন্দির পথে যাওয়ার আগে যে-ধরনের সতর্কতা নেওয়া দরকার ছিল সরকার তা নেয়নি। অন্যদিকে, জিএসটি বলবৎ করার জন্য যে ধরনের পরিকাঠামো প্রয়োজন দেশে তা গড়ে তোলা হয়নি। তার ফলে জিএসটি নিয়ে নানা ধরনের ফাঁকি এবং জালিয়াতির শিকার হয়েছে দেশের রাজকোষ। অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, আয়কর সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং আয়কর ফাঁকি রুখতে নেমেও সরকারের অতি সক্রিয়তায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে বাণিজ্যমহল। সব মিলিয়ে মাইক্রো ছোট মাঝারি বড় প্রভৃতি সব ধরনের ব্যবসা এবং শিল্পে মন্দা চলে এসেছে। বিশেষ ভাবে ধাক্কা খেয়েছে নির্মাণ শিল্প এবং সব ধরনের গাড়ি শিল্প। এই দুটি ক্ষেত্র একইসঙ্গে বিপুল রেভিনিউ দিয়ে থাকে এবং কর্মসংস্থানেরও বড় ভরসা। সব মিলিয়ে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ক্রমনিম্নমুখী। বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরে সর্বাধিক। নুয়ে-পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপৎকালীন ভাণ্ডারের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাধ্য হয়েছেন কর্পোরেট কর কাঠামো একটু নরমসরম করতে এবং রপ্তানি বাণিজ্যে গতি আনার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ করতে। পাশাপাশি চলছে ব্যাঙ্কে আমানত এবং ঋণ দুটি ক্ষেত্রেই সুদের হার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে দেওয়ার পালা। গতি হ্রাসের কারণে ভারতের অর্থনীতি যে পুরনো প্রত্যাশা ধরে রাখতে পারেনি এবং কৌলীন্য অনেকটাই খুইয়েছে তার সাক্ষ্য দিচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির তালিকা। এই আন্তর্জাতিক তালিকায় ভারত গত বছরের চেয়ে দশ ধাপ নেমে গিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের তৈরি এই তালিকায় ভারত ৫৮ থেকে ৬৮তম স্থানে নেমে গিয়েছে।
বলা দরকার, বিশ্ব অর্থনীতির হাল সুখকর নয়। আইএমএফের শীর্ষ কর্ত্রী ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার আশঙ্কা, বিশ্ব অর্থনীতি ৯০ শতাংশ গতি হারাতে পারে। তাঁর ধারণা, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব উদীয়মান দেশগুলির উপরেই বেশি পড়েছে। ভারতের এই যে সঙ্কট তার জন্য বিশ্ব অর্থনীতির হালফিল চেহারা অনেকাংশে দায়ী। শুধু ভারত নয় এশিয়ার অপর বিস্ময়কর অর্থনীতি চীনও এই প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেনি। আইএফএফের পরামর্শ হল—এই পরিস্থিতিতে সুদের হার কমিয়ে বাজারে টাকার জোগান বাড়াতে হবে। তাতে সুফল মিলবে। যথাসময়ে আর্থিক সংস্কারের মাধ্যমে উদীয়মান অর্থনীতিগুলিতে দ্রুত দ্বিগুণ গতি সঞ্চার করা সম্ভব। ভারত যে সেদিকেই হাঁটছে সরকারের সাম্প্রতিক একাধিক পদক্ষেপের ভিতরে তার সাক্ষ্য রয়েছে। তবে, একটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে বাজারে টাকার জোগান বাড়াতে গিয়ে যেন প্রবীণদের বিপন্ন করে তোলা না-হয়। কারণ, তাঁদের একটি বড় অংশেরই জীবন সঞ্চিত অর্থের সুদের উপর নির্ভর করে চলে। সুতরাং সঞ্চয়ের উপর সুদের হার কমানোর এই চরৈবেতি যেন নোটবন্দির মতো নতুন এক আতঙ্কের নাম না-হয়ে ওঠে।