কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাঙালির প্রাণের এই উৎসবে মিলিত হোক সব ধর্ম, সব বর্ণ, সব জাত, সব শ্রেণীর মানুষ। এক মহামিলন যজ্ঞে উপনীত হয়ে আমরা যেন দানবদলনী মাকে করজোড়ে বলতে পারি, মা আমাদের চেতনা দাও। রূপ, অর্থ, যশ, খ্যাতির মোহান্ধকার দূর করে আমাদের ভিতরে সচ্চিদানন্দের জাগরণ ঘটাও। দুর্গা পুজোর আয়োজনের মূল সুরটাই হল, হোমাগ্নির তেজে অন্তরে বাস করা অহমিকার খড়কুটো ভস্ম হয়ে যাওয়া। দুর্গা পুজো হল একমাত্র সেই দেবীর আরাধনা, যিনি অসুররূপী অহঙ্কারকে বিনাশ করে পৃথিবীকে রক্ষা করেন। অসুর তো এখানে প্রতীক মাত্র। জীবনের চলার ক্ষেত্রে আমরা অনেকসময় টের পাই যে, আমাদের অনেকের ভিতরেই এক-এক রূপে যেন অসুর বাস করে। যে অশুভ শক্তি আমাদের পাপকর্মে লিপ্ত করে। ভিতরে কামনা, বাসনা, লোভ, হিংসা প্রভৃতি রিপুকে সর্বক্ষণ জাগিয়ে রাখে। এই অসুরই বিভিন্ন ছদ্মবেশে আমাদের চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। মহিষাসুরও তেমনই এক অন্ধকারের রূপকমাত্র। দেবী তিনিই, যিনি আমাদের উপরের সেই ছদ্ম আবরণটাকে এক টানে উন্মুক্ত করে আমাদের উন্নাসিকতাকে বিদ্ধ করেন ত্রিশূল নামক প্রতীকী অস্ত্রের দ্বারা। কারণ এই ত্রিশূলেরও তিনটি শূল বিবিধ প্রতীক হিসাবে গণ্য হয়। সে কারণে মা দুর্গা যে অস্ত্রগুলি ধারণ করে থাকেন, এবং সর্বশেষে মহিষাসুরকে বধ করেন, তার সবটিই হচ্ছে রূপকধর্মী।
অতীতে একসময়ে দুর্গোৎসব ছিল ছোট রাজারাজড়া কিংবা জমিদারদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক পুজো। যেখানে পাঁচটা গ্রামের মানুষ, বলা ভালো হিন্দু-মুসলমান বা অন্য ধর্মাবলম্বী প্রজা নির্বিশেষে যোগ দিত। ধর্মীয় কারণে পৃথক পংক্তিভোজের আয়োজন থাকলেও আনন্দানুষ্ঠানের কিংবা আয়োজনে কোনও খামতি থাকত না। এমনকী বিসর্জনের শোভাযাত্রা অথবা শহর থেকে আনা যাত্রাগানের আসরেও সকলে আনন্দে মেতে উঠত। এটাই ছিল গ্রামবাংলার সংস্কৃতি। পরবর্তীকালে যখন দুর্গা পুজো বারোয়ারি পুজোর রূপ নেয়, তখনও তো মা সকলেরই । সতেরও মা, অসতেরও মা। সেই কারণে দুর্গা পুজো ঘরের বাহিরে এক সর্বজনীন পৃথিবী রচনা করে বলেই হীনদরিদ্র থেকে সমাজের উচ্চকোটির মানুষটি পর্যন্ত এক সারিতে এসে দাঁড়াতে বাধ্য হন। মা দুর্গার পদতলে সমস্ত অহঙ্কারকে ধুলোয় পর্যবসিত করে মনকে শুদ্ধ করার পুজোর নামই দুর্গা পুজো। আজ, আমাদেরও সেই একটাই প্রার্থনা থাকুক। মা, তুমি কিছু মানুষের অন্তরে থাকা অসুরকে বিনাশ করে আমাদের মধ্যে শুদ্ধ চেতনা গড়ে তোলো। মোহ-আসক্তি, কাম-লালসা, লোভ-প্রতিহিংসার অন্ধকার কাটিয়ে চৈতন্য দাও। সকলকে ভালো রাখো। আমাদের সকলের আত্মাকে শুদ্ধ করো।