কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
উৎসবের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত মধুর সমাপ্তি। শুধুই আনন্দ উপভোগ। কেউ কোনোভাবে আহত বা দুঃখিত না-হয় সেটা নিশ্চিত করা কর্তব্য। আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাই এই গুরুদায়িত্ব সরকারকেই নিতে হয়। রাজ্য সরকার আন্তরিকভাবেই সেই দায়িত্ব বছর বছর পালনের চেষ্টা করে। তবু, কোনও কোনও বছর আমাদের লক্ষ্যপূরণ হয় না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হয়। পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে পরামর্শক্রমে এবার সেটাই হয়েছে। সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে মহানগরের উৎসবে। কারণ, কলকাতাই সবসময় আকষর্ণের কেন্দ্রে অবস্থান করে। এখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ থাকে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার মানুষও সময় বের করে কলকাতায় চলে আসে। আসে প্রবাসী বাঙালিরা। বহির্বঙ্গ, এমনকী বহির্ভারতেও কিছু মানুষ আসে, জীবনে একটি বারের জন্য হলেও, কলকাতার আত্মাকে চিনতে। দ্বিতীয় তৃতীয়া থেকেই মানুষ ঠাকুর দেখতে আসে। পঞ্চমী থেকে বস্তুত ঢল নামে নামী মণ্ডপগুলিতে, যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এই মওকাতেই কিছু মানুষ নেমে পড়ে তাদের বিকৃত বাসনা চরিতার্থ করতে। কেউ করে হাতসাফাই, কেউ মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে কিংবা কারও বাসনা জাগে অনাবশ্যক দাদাগিরি হিরোগিরির। আর এসব অনেকসময় ছোটখাটো ব্যাপারে সীমাবদ্ধ থাকে না, বড় অশান্তিরই আকার নেয় কখনও। বলা বাহুল্য, এমন ব্যাপারগুলি এত বড় এত সুন্দর আয়োজনের বুকে কলঙ্কদাগ হিসেবে লেগে থাকে। অতএব পুলিসকে প্রশাসনকে সেইমতো সতর্ক ও কঠোর হতেই হয়। তাই এবার কলকাতা পুলিসের তরফে কিছু বাড়তি সতর্কতাও নেওয়া হয়েছে। দুর্বৃত্তদের রুখতে লালবাজার গোয়েন্দা বিভাগের বাছাই করা অফিসারদের নিয়ে তিনটি স্পেশাল টিম তৈরি করা হয়েছে। নয়টি ডিভিশনে ভাগ হয়ে গিয়ে তারা সাদা পোশাকে টহলদারি চালাচ্ছে। রাস্তায় পুলিস মোতায়েন হয়েছে চতুর্থীর বিকেল থেকেই। পুলিস বাড়ানো হয়েছে পঞ্চমীতে। ৭০০-৮০০ মহিলাসহ এবার প্রায় ২০ হাজার পুলিস সতর্ক প্রহরায় থাকছে। ইভটিজারদের রুখতে থাকছে ‘উইনার্স’ বাহিনী। সমস্ত বাহিনী থাকছে তিনটি পৃথক শিফটে। এবার ভিআইপিদের জন্য পাইলট কার বন্ধ করে দিয়ে দমকলের জন্য ১৩টি পাইলট কারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তারা যে-কোনও অগ্নিকাণ্ডের মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ করবে। এছাড়া রয়েছে স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনগুলিতে ৪৬টি ওয়াচটাওয়ার, ১৭৪টি পুলিস সহায়তা বুথ, ২৫টি হেভি রেডিও ফ্লাইয়ং স্কোয়াড, ২৬টি পিসিআর ভ্যান, ৩১টি আরসিপি ভ্যান, নয়টি ভ্রাম্যমাণ মিসিং স্কোয়াড, গঙ্গাবক্ষে সাতটি টহলদারি লঞ্চ, বহু মণ্ডপে সিসিটিভি, ২৭টি কুইক রেসপন্স টিম, সাধারণ অ্যাম্বুলেন্স, ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রভৃতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বিশেষ সতর্ক থাকেন। সতর্ক প্রশাসন এবং পুলিসের প্রধান কর্তারা। সোজা কথায়, বাংলার সর্ববৃহৎ উৎসবটি যাতে সামান্যতম ত্রুটি ছাড়াই পালিত হতে পারে তার নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থাই করা হয়েছে।
তবে, এটাও ভেবে দেখা দরকার যে শুধু সরকার দিয়ে এত বড় আয়োজন স্বয়ংসম্পূর্ণ সর্বাঙ্গসুন্দর হতে পারে না। সমস্ত মানুষের সদিচ্ছাটা বেশি দরকার। আশা করা যায়, রাজ্যবাসী সেই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। কারণ, দুর্গোৎসব বাংলার এক বিরাট পরিচয়। এই উৎসবের সঙ্গে বাংলা সমার্থক হয়ে উঠেছে বহুকাল যাবৎ।