কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
আর উত্তরপ্রদেশ সরকার ঠিক এমন একটি সময়কেই অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার জন্য বেছে নিয়েছে। ওই রাজ্যে যত অনুপ্রবেশকারী আছে তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করার জন্য যোগী আদিত্যনাথের সরকার সমস্ত জেলা প্রশাসনের কাছে সার্কুলার পাঠিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের সীমানা যেসব এলাকায় শেষ হচ্ছে সেইসব এলাকায় এবং শহরগুলিতে বেশি করে তল্লাশি চালাতে বলা হয়েছে। প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, ওই রাজ্যে বেআইনিভাবে বসবাসকারীদের শুধু খুঁজে বের করা নয়, চিহ্নিত অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেপ্তার করাও শুরু হয়েছে। সরকার কোনও রাখঢাক করেনি। উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে খবর আছে যে কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি, ডোমেস্টিক হেল্প, সিকিউরিটি গার্ড, রিকশ চালক প্রভৃতি পেশায় বহু বাংলাদেশি নারীপুরুষ যুক্ত রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার এদের বহিষ্কার করতে বদ্ধপরিকর। সরকার অবশ্য এই বলে অভয় দিয়েছে যে, এই অভিযানের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) কোনও সম্পর্ক নয়। ১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও কলকাতায় এসে বলে গিয়েছেন, দেশের প্রকৃত নাগরিকদের কোনও ভয় নেই। তবে, অনুপ্রবেশকারীদের এদেশে থাকতে দেবেন না। তাদের বেছে বেছে চিহ্নিত করে তাড়ানো হবে। অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির অবসান ঘটানোর ব্যাপারে তিনি বদ্ধপরিকর বলে জানিয়ে গিয়েছেন।
যথেচ্ছ অনুপ্রবেশ কোনও রাষ্ট্রের পক্ষে কাম্য নয়। বিশেষত ভারতের মতো রাষ্ট্র, যেটি জনবিস্ফোরণের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণই যার অন্যতম লক্ষ্য। অবৈধ অবাঞ্ছিত জনসংখ্যা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রগতি ব্যাহত করতে পারে, তারা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রশ্নেও একটি বড় কাঁটা। সব ঠিক আছে। কিন্তু, দেখতে হবে অবৈধ বাংলাদেশি বা অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার নামে যেন শুধুমাত্র একটি ভাষাগোষ্ঠী টার্গেট না-হয়ে পড়ে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। দিল্লি, মুম্বইসহ অনেক জায়গায় আগে বহু বার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে গিয়ে নির্বিচারে বাংলাভাষীদের সঙ্গে অবাঞ্ছিত ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক নিরীহ বাংলাভাষী মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারা অপমানিত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, তারা পশ্চিমবঙ্গের কোনও কোনও জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। অতএব, এবার যে অভিযান উত্তরপ্রদেশে চলছে এবং অনুমান করা যায়, অভিযানটি আরও অনেক জায়গায় বিস্তৃতও হবে—তার কোথাও যেন আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি না-হয়। শুধুমাত্র বাংলাভাষী বা বাঙালি হওয়াটা যেন অপরাধ বলে গণ্য না-হয়। একজনও নির্দোষ নিরপরাধ ভারতবাসীকে উত্ত্যক্ত বা অপমান করাটাও কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষে লজ্জার। উৎসবের মরশুমটি যাতে সকলের জন্য খুশির আনন্দের হয়ে ওঠে তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।