কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
পিতৃপক্ষের শেষ হয়ে দেবীপক্ষের এই সূচনাপর্বে শুধু বাংলা নয়, গোটা ভারতবাসী যেন জেগে ওঠে উৎসবে। অকালবোধনের পর রাম যেমন রাবণকে ধ্বংস করে রক্ষা করেছিলেন ধরিত্রীকে, তেমনই আজ যেন সেই শপথের দিন হয়, জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বিভেদের কালিমা দূর হয়ে যাক আমাদের সকলের ভিতর থেকে। ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত রামচন্দ্র যেমন কুলগৌরব ভুলে তথাকথিত মনুষ্যেতর শ্রেণী বানরসেনা সাহায্যে সত্যপ্রতিষ্ঠার ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন রাক্ষসরাজকে, তেমনই আজও এই শুভ মুহূর্তে আমাদের সকলের মধ্যেও যেন সত্য-শিব ও সুন্দরের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়।
শারদোৎসব বাঙালির কাছে সারা বছরের শ্রেষ্ঠ উৎসব। শরৎকাল সেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে আপন গরিমায়। কৃষিনির্ভর বাংলায় আর্থিক ভিত মজবুত হতে শুরু করে এই সময়ই। সদ্য বর্ষার শেষে আকাশ-বাতাসে ভাসে এক অপূর্ব নান্দনিক রূপ। প্রকৃতি এই সময় যেন উজাড় করে ঢেলে দেয় তার রূপ। আর তাই মা দুর্গাও মর্ত্যে আসেন এই সময়েই। মহালয়া এসে যাওয়া মানেই উমার পায়ের আওয়াজ যেন শুনতে পান কবিরা, তাঁদের আগমনি গানে সেই কথাই সুরে সুরে বলেছেন কতজনই। এই পুজোকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বাংলা কাব্য ও গীতিকবিতার নানান ভাণ্ডার। এই পুজোকে ঘিরে এদেশের আর্থিক চক্র সচঞ্চল হয়ে ওঠে। অর্থের হাতবদলের ফলে সমাজের একেবারে তলার দিকেও বিকাশ পৌঁছয় সহজে।
কিন্তু, খারাপ লাগে এই শারদোৎসবের পুজোকে নিয়ে যখন রাজনীতির কলুষ ছায়া পড়ে। পুজো কার? পুজো কি কোনও দলের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে পারে? পুজোয় কি আমার-তোমার হয়! না, পুজো একটি সর্বজনীক রূপ। মা দুর্গার দশ হাতের মতো দশ জন ছাড়াও পুজো করা অসম্ভব। পুজোর আঙিনা মানে—চণ্ডাল ভারতবাসী থেকে দরিদ্র ভারতবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেন ব্রাহ্মণ সন্তান। উচ্চনীচ, হীন-দুর্বল, ধনী-দরিদ্র, শক্ত-অশক্ত, পণ্ডিত কিংবা মূর্খ—সকলেরই অবাধ প্রবেশাধিকার মায়ের মণ্ডপে। মা যে সকলের একজনই। সেখানে রং দিয়ে কাউকে পৃথক করা যাবে না। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, এই পুজোকে কেন্দ্র করে দু’একটি রাজনৈতিক দল দড়ি টানাটানি চালাচ্ছে। যার জেরে বিরূপ প্রভাব পড়ছে জনমানসে।
সুতরাং, একথা ঠিক আমাদের বাঙালিদের কাছে দুর্গোৎসব এক প্রাণের উৎসব। অতএব, সেই উৎসবে লাগুক আনন্দের ছোঁয়া। শত্রুতা দূরে সরিয়ে পরম বান্ধবের মতো বুকে জড়িয়ে ধরাই হোক এই পুজোর মন্ত্র। কয়েকটা দিন, অন্তত এই কয়েকটা দিন বিভেদ, অশান্তি, কুকথার অন্ধকার দূর করে মনের মাঝে জ্বলে উঠুক স্বর্গীয় দীপ। পিতৃপুরুষের কাছে তর্পণে শুধু নয়, পিতৃপুরুষদের দেখানো পথে চলাই হোক আমাদের সকলের তিলাঞ্জলি।