কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের তুলনায় রাজ্য সরকারি কর্মীরা আর্থিক দিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে বার বার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগটি দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা পড়ার আগে সেই ক্ষোভ যে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল তার আঁচ পাওয়া গিয়েছে গত লোকসভার ভোটের ফলে। ওই নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালট গণনার ফলাফলে তার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। বোঝা গিয়েছিল সরকারি কর্মীদের অনেকেই তৃণমূল সরকারের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। এখন রাজ্য সরকারি কর্মীরা যে বেতন কাঠামোয় বেতন পান তা কার্যকর হয়েছিল ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে। এরপর দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষা। বাম সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল সরকার। আশায় ছিলেন ওই কর্মীরা। এবার সরকারের প্রতি রাজ্য সরকারি কর্মীদের আস্থা অর্জনে মমতার সরকার মাস্টার্স স্ট্রোকটি দিল। কর্মীদের গ্র্যাচুইটির ঊর্ধ্বসীমাও ৬ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে বেতন কমিশন ১০ লক্ষ টাকা করার যে সুপারিশ করেছে তাও বাড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। তিনি ১২ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব দেন, যা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, কর্মীর হাউস রেন্ট অ্যালাউন্সের ঊর্ধ্বসীমাও বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করার যে প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রী দেন সেটিও গৃহীত হয়েছে। বেতন কমিশন নন-প্র্যাকটিস অ্যালাউন্সের যে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছিল মুখ্যমন্ত্রী তা বাড়িয়ে করে দিলেন ২ লক্ষ ১ হাজার টাকা। রাজ্য সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের জন্য মাসে মাসে চিকিৎসাভাতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে যা জরুরি ছিল। আরও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার টাকার অঙ্ক বাড়ছে। ২০২১ সালের বিধানসভার নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলিকেও ছাপিয়ে গিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি লাগু করার উদ্যোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কল্পতরু হলেন। তিনি যে কথার খেলাপ করেন না, কর্মীদের কথা ভাবেন, এই বার্তাটি দিলেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে রাজ্য সরকারের কোষাগারে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকার বোঝা চাপবে। তবে, নয়া বেতন কাঠামো ঘোষণার মধ্যে এরিয়ার দেওয়ার ব্যাপারে কোনও উল্লেখ নেই। সরকার বিরোধীরা অবশ্য এ ব্যাপারে তাদের চিরাচরিত কায়দায় বিষয়টিকে আর্থিক বঞ্চনা এবং বিভ্রান্তিকর হিসেবেই দেখছেন। তবে, এটা বলাই যায় এই ঘোষণায় ফের একবার প্রমাণ হল—মমতা সরকারের সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই। আর্থিক টানাপোড়েন ও সীমিত সাধ্যের মধ্যেই কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় এই সরকার সচেষ্ট।
একথা ঠিক, রাজ্য সরকারি কর্মীদের পাওনাগণ্ডা দিতে নানা সময়ে নানা টালবাহানা হয়েছে। এমনটাও নয় যে তাঁদের অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তবে, রাজ্য সরকারের আর্থিক সমস্যার বিষয়টিও সরকারি কর্মীদের মাথায় রাখা দরকার। বিশেষত যেখানে বাম সরকারের মোটা অঙ্কের ঋণের বোঝা চেপেছে তৃণমূল সরকারের ঘাড়ে। তাই, মোটা টাকার সুদ গুনতে হচ্ছে সরকারকে। হতে পারে, আর্থিক পাওনাগণ্ডার প্রশ্নে সরকারি কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমনে, অর্থাৎ ২০২১-এর নির্বাচনে তা যাতে বিরূপ প্রভাব না ফেলে সেই লক্ষ্যে এগচ্ছে সরকার। তবু বলা যায়, কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় মুখ্যমন্ত্রী যেসব পদক্ষেপ করছেন তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বেতন কমিশনের সুপারিশকে ছাপিয়ে গিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেতন সহ অন্যান্য আর্থিক সুযোগবৃদ্ধির যে উদ্যোগ নিলেন তা যেন তারই প্রমাণ।