কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
পুরসভা নিজের মতো তাদের বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবুও কোথাও যেন একটা সমন্বয়ের অভাব ফুটে উঠছে। কেন? যেমন ধরা যাক, কলকাতা পুরসভার কথা। গত কয়েকদিনের সংবাদে চোখ বোলালেই দেখা যাবে, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার জীবাণুতে আক্রান্তরা যে হাসপাতালকে চিকিৎসা করানোর অন্যতম ভরসাস্থল হিসেবে দেখেন, সেইসব সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ভিতরেও যত্রতত্র মারণ-মশার আঁতুড়ঘর মিলছে। বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালের ভিতরেই মিলেছে স্তূপাকার করা জঞ্জাল। শুধু এটাই নয়, শহরের আরও ১২টি হাসপাতালের মধ্যে মিলেছে মশার আস্তানা। অবিলম্বে এসব পরিষ্কার করার জন্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন কলকাতা পুরসভার কমিশনার। শহরের ভিতর ফাঁকা পড়ে থাকা জমিও যে ডেঙ্গুর পক্ষে কতখানি ক্ষতিকারক হয়ে উঠছে, সেই চিত্রও উঠে এসেছে কয়েকদিন আগে। দক্ষিণ শহরতলির পাটুলি ও সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় একই চিত্র ধরা পড়ায় সেই কলকাতা পুরসভাই চিঠি পাঠিয়েছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে। তাতে কেএমডিএ’র হাতে থাকা ৪৬টি জায়গাকে ডেঙ্গুর মশার আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইভাবে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের অন্তর্গত ৩৪টি জায়গায় ডেঙ্গুর মশার আঁতুড়ঘর মিলেছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় পাওয়া গিয়েছে লার্ভাও। কলকাতা পুরসভার কমিশনারের ভাষায়, জঞ্জাল ও জলে ডেঙ্গুর মশা বংশ বিস্তার করছে। এমন চলতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এ সবই খণ্ডচিত্র। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হল, বিভিন্ন জায়গা, তা সে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ হোক, বা কেন্দ্রের অধীনে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ঢিলেমি ভাব এসেছে। আর সেই কারণেই হয়তো ডেঙ্গুর প্রকোপ এ বছর শুরু থেকে সেভাবে উদ্বেগজনক না থাকলেও সম্প্রতি আবার সে থাবা বসাতে শুরু করেছে।
২০১১ থেকে ২০১৩ সাল, এই তিন বছরে শহরে ডেঙ্গু সংক্রমণ উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। তারপরই মুখ্যমন্ত্রী নিজের কাঁধে এর দায়িত্ব তুলে নেন। ডেঙ্গুর মরশুম বলে একটা সময় ধরা হতো জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, এই তিনমাসকে। কিন্তু পরে দেখা যায়, বছরের শুরুতেও যেমন এর প্রকাশ ঘটেছে, তেমনি ডিসেম্বর মাসেও এর প্রকোপ ধরা পড়েছে। তাই বছরের একেবারে গোড়া থেকেই এবং বছরভর ডেঙ্গু নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইমতো স্বাস্থ্য দপ্তরও ঝাঁপিয়ে পড়ে। তৈরি হয় ডাক্তার, নার্স এবং প্রশিক্ষিতদের নিয়ে বিশেষ বাহিনী, যারা বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখতে শুরু করেছে, চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে কি না। এমনকী যে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তর সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন, সেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ কমিটি। ফলে উদ্যোগ, পদক্ষেপ, সক্রিয়তার অভাব নেই। যেটুকু দরকার তা হল, আরও নজরদারি এবং বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে আরও সক্রিয়তা। আর পুরসভার সঙ্গে রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় সাধনও অত্যন্ত প্রয়োজন। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ডেঙ্গু তার চরিত্রও ঘন ঘন বদলাচ্ছে। এখন যে সব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তার অধিকাংশই ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। মানুষকে সে ব্যাপারেও সচেতন করাটা আশু কর্তব্য।