কর্মক্ষেত্রে অশান্তি সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কারও শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার— ... বিশদ
একদিকে অবাধে ঋণ নেওয়ার নামে অবাধে ব্যাঙ্ক লুট হয়েছে বলে অভিযোগ তো আছেই। অন্যদিকে শিল্প ক্রমেই মুখ থুবড়ে পড়ছে। দুঃখী মানুষের দুঃখ ভোলার একটা মহৌষধি হল সুরাপান। তেমনই ভেঙে পড়া অর্থনীতি ভোলার পথ হল কড়া দেশাত্মবোধ। কিন্তু অর্থনীতির বেহাল অবস্থার কারণগুলি নিত্য আমাদের গায়ে কাঁটা ফোটাচ্ছে যে! প্রতিদিন বাজারে গেলে যে সরাসরি আঁচ আমাদের গায়ে লাগছে, তা কীভাবে ভোলা যাবে!
এই অর্থনীতি বিষয়টি অনেকের থেকেই যে মনমোহন সিং ভালো বোঝেন, এ নিয়ে মুখে না মানলেও মোদি সরকারের সমর্থকরা পর্যন্ত মনে মনে স্বীকার করেন। মনমোহন সিং কংগ্রেসের নেতা। তিনি এই অর্থনীতির বিরোধিতা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর কথাগুলি শুনলেই বোঝা যায়, রাজনৈতিক সুর সেখানে খুব বেশি নেই। বরং একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদের আশঙ্কাই সেখানে ধ্বনিত হয়েছে। যে আশঙ্কা থেকে একদিন উর্জিতরা মানে মানে সরে পড়েছেন।
মনমোহন এই অর্থনীতিকে বলেছেন ‘ম্যানমেড ব্লান্ডার্স’। অর্থাৎ স্বাভাবিক পতন এটা নয়। ব্যক্তির ভুলনীতির কারণেই এই পতন। একে একে কারণগুলি তিনি উল্লেখ করেছেন। একদিকে বলেছেন নোটবন্দির কথা এবং অন্যদিকে বলেছেন তাড়াহুড়ো করে জিএসটি চালু করা। সত্যিকথা বলতে কী, নোটবন্দির সুফল আমরা এখনও চোখে দেখিনি। সেই প্রক্রিয়ার সুফলের আঁচ পেতে আর কতদিন লাগবে, আমরা জানি না! আমরা কেউই জানি না। শুধু জানি, আমাদের চারপাশের আলো ক্রমশ কমে আসছে। কোথায় পা রাখব আমরা? সর্বত্রই মন্দা দশা। গাড়ি-শিল্পে ভয়ঙ্কর মন্দা। মানুষের হাতে টাকা আছে কিনা, সেটা বুঝিয়ে দেয় গাড়ি-শিল্প। গত কয়েকমাসে অটোমোবাইল শিল্পে সাড়ে তিন লক্ষ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। একে কর্মসংস্থান নেই, তার উপর সর্বত্র কর্মীছাঁটাইয়ের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। শিল্প এবং কৃষি দুটি ক্ষেত্রেই সঙ্গীন অবস্থা। কৃষি উৎপাদনের হার যথার্থ নয়। চাষিরা ফসলের উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। গ্রামীণ মানুষের আয় কমছে। আর্থিক বৃদ্ধির হার যেভাবে কমেছে, তাতে আশঙ্কাটা অমূলক নয়।
এছাড়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে সরকার যেভাবে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে, তারও সমালোচনা করেছেন মনমোহন। তিনি বলেছেন, এই টাকা তুলে নেওয়ার অর্থ দেশের আর্থিক অবস্থা সামাল দিতে সরকারের নাজেহাল অবস্থা। এভাবে অর্থনীতিকে মজবুত করা যায় না। তার পৃথক উপায় রয়েছে। সেই পথের শরিক হয়ে সরকারকে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
একদিকে অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য আমরা প্রতিদিন শুনছি। কেউ বলছেন, ‘গেল গেল’। আবার কেউ বলছেন, ‘আহাহা এমন অপূর্ব অর্থনীতি দেশ আগে কখনও দেখেনি’। মানুষ এসব সূচক, জিডিপি বোঝে না। কিন্তু নিত্যদিন সে ভালো আছে কিনা, সেটা সে বোঝে। পকেটে তার টান পড়ছে কিনা সেটা সে বোঝে। আমাদের হরিপদ কেরানির জীবনে একটা কয়েনের মূল্য অনেক। সেটাকে যতটা কাজে লাগানো যায় ততই মঙ্গল। আমরা ওই কয়েনের লেনদেন থেকেই বাজারের ভালোমন্দ বিচার করতে সক্ষম। তাতে বোঝা যাচ্ছে আমরা তেমন ভালো নেই। কিন্তু ভালো হওয়া দরকার। রাজনীতির সংকীর্ণতা মুছে ভালো দেশ গড়াই তো সকলের লক্ষ্য। সেখানে দেশের নিরাপত্তার জন্য যেমন অস্ত্র কেনা দরকার, সীমান্তে সুরক্ষা দরকার, প্রতিবেশী দেশকে সমঝে দেওয়া দরকার, তেমনই দরকার মজবুত অর্থনীতি। দরকার দেশের প্রতিটি মানুষকে ভালো রাখার সুষ্ঠু পরিকল্পনা। এখনও তেমন দেরি হয়নি। ‘ম্যানমেড ব্লান্ডার’ সত্যিই যদি হয়ে থাকে, তবে তাকে কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সুবুদ্ধিই আমরা কামনা করি। মনমোহনের সিংয়ের বক্তব্যে যেটুকু রাজনৈতিক সুর আছে, সেটুকু ছেঁটে ফেলার পরও যে আর্জিটুকু পড়ে থাকে, সেটাই সত্য হোক। আসুন, অর্থনীতির হাল ফেরাতে সকলে মিলে উদ্যোগী হই। দলমতনির্বিশেষে উদ্যোগটুকু দরকার। দেশের স্বার্থে। নতুন দিনের লক্ষ্যে।