সেলেব থেকে আম জনতা মজেছে নতুন এক অ্যাপে। এক লাফে বয়সটা বেড়ে যাচ্ছে অন্তত ৪০টা বছর। ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ছেয়ে যাচ্ছে বুড়ো-বুড়িতে। হঠাৎই নিজের বয়স বাড়ানোর হিড়িক উঠেছে বিশ্বজুড়ে। পাক ধরা চুল, একটু মেদ বেড়ে যাওয়া চেহারায় দু-তিন দশক বাদের নিজেকে দেখতে কেমন লাগে, বুড়ো হওয়ার রহস্য জেনে নিয়ে ভার্চুয়াল আয়নায় সেই আমিকে দেখে নেওয়ার ইচ্ছে। জোয়ারে গা ভাসিয়েছে হলিউড, বলিউড থেকে ক্রীড়াজগৎ। এই কারসাজি ফেসঅ্যাপ নামের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি মোবাইল অ্যাপের। এমনিতে ফেসবুকে এমন অসংখ্য অ্যাপ আছে যা আপনার সঙ্গে কোনও সেলেবের মিল খুঁজে বের করে, কোনওটা বুড়ো বানিয়েও দেয়। কিন্তু ফেসঅ্যাপের মতো এত নিখুঁত অন্য কোনোটাই নয়। ইতিমধ্যেই এই অ্যাপের ডাউনলোড সংখ্যা কয়েক কোটি ছাড়িয়েছে। তবে, সারা দুনিয়া যখন এই ফেসঅ্যাপে মেতেছে, তখন ভ্রুও কুঁচকাচ্ছেন কেউ কেউ। শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, ফেসঅ্যাপ ব্যবহার করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
ফেসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ অবশ্য এক বিবৃতিতে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ফেসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের সাইটে ছবি আপলোডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সব ছবি মুছে ফেলা হয়। ফেসঅ্যাপে ডিভাইসের ছবি আপলোডের অনুমতি দিলেও তারা শুধু নির্বাচিত ছবিটিই আপলোড করে। ডিভাইসের সব ফাইল তারা আপলোড করে না। কিন্তু ফেসঅ্যাপকে কি আপনি বিশ্বাস করবেন? ফেসঅ্যাপ তো নতুন কোনও অ্যাপ্লিকেশন নয়। ২০১৭ সালেই এই অ্যাপ বিভিন্ন ফিল্টারের কারণে ভাইরাল হয়েছিল। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে চালু আছে এটি। নিউরাল ফেস ট্রান্সফরমেশনস অ্যাপ হিসেবে তৈরি করেছে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়্যারলেস ল্যাব। অ্যাপটির মাধ্যমে মানুষের মুখের বিভিন্ন রূপ বদল করার সুবিধা ওই সময় থেকেই চালু ছিল। ফিল্টারটি ভাইরাল হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন সাইটে বলা হচ্ছে, এটি অনেকটাই বাস্তবসম্মত ছবি তৈরি করতে পারছে এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ছবি সম্পাদনার কাজ করছে জনপ্রিয় অ্যাপটি। অ্যাপটিতে ব্যবহৃত হয়েছে নিউরাল নেটওয়ার্কস। এতে পরিবর্তিত ছবিটি বাস্তবের কাছাকাছি করার চেষ্টা করা হয়। তবে এর ব্যবহার কিন্তু পরে বিপদ ডেকে আনতে পারে। এর শর্তাবলি সে কথাই বলছে। স্মার্টফোন থেকে যে-কোনও ছবি নিজেদের সার্ভারে আপলোড করে এই ছবি এডিটিংয়ের কাজ করে ফেসঅ্যাপ। সেখানেই সন্দেহের সূত্রপাত।
ট্যুইটারে এলিজাবেথ পটস উইন্সটাইন নামে এক মহিলা ফেসঅ্যাপ ব্যবহারের শর্তাবলি পোস্ট করে একটি ট্যুইট করেছেন। সেখানে যা লেখা রয়েছে, তা পড়লে আপনার পিলে চমকে উঠবে! ফেসঅ্যাপ ব্যবহারের শর্তাবলিতে লেখা রয়েছে, এই অ্যাপ ব্যবহার করলে আপনি কোম্পানির সার্ভারে আপলোড করা সব ছবি, নিজের নাম, আপনি কী পছন্দ করেন, আপনার কণ্ঠ—এইসব তথ্যই আপনি বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সম্প্রতি অ্যাপ নির্মাতা জসুয়া নোজি এক ট্যুইটে ফেসঅ্যাপের পক্ষে অনুমতি ছাড়াই ব্যাপক তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া ফেসঅ্যাপের পক্ষে সংগৃহীত তথ্য নিয়ে ফেশিয়াল রিকগনিশন অ্যালগরিদম তৈরির সন্দেহ করছেন অনেকেই। ছবি মুছে ফেলার পরেও তা কাজে লাগিয়ে সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব। সাইবার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই অ্যাপ ব্যবহারের আগে অনেকেই শর্তাবলি খুঁটিয়ে পড়েন না। তার ফলে অজান্তেই সেই সব শর্তাবলি মেনে নেন। শর্ত অনুযায়ী, ওই অ্যাপ বিনামূল্যে ব্যবহারের বিনিময়ে ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, ফেসবুকে তাঁর বন্ধুদের তথ্যও তুলে দিচ্ছেন সংস্থার সার্ভারে। ওই অ্যাপে তিনি যত ছবি ব্যবহার করছেন,সেগুলিও সংস্থার কাছে চলে যাচ্ছে। তবে ফেসঅ্যাপের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলছে, পেইড সাবসক্রিপশন মডেলের মাধ্যমে তারা অর্থ আয় করে। তারা কোনও নিয়মবহির্ভূত কাজ করছে না। সম্প্রতি গুগল, ফেসবুকের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনার পর থেকে অনেকেই সচেতন হয়েছেন। এর আগেও একাধিক অ্যাপ এই ধরনের কাজ করে কয়েক কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। অনলাইন দুনিয়ায় এখন সবচেয়ে দামি জিনিস গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য। আপনার তথ্য অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাববেন নিশ্চয়?